বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকেই, ভারতের রাজনৈতিক আলোচনার তুঙ্গে জম্মু-কাশ্মির। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে, এ রায়কে বিশাল জয় হিসেবে দেখছে মোদি সরকার। সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অঞ্চলটির রাজনীতিকরা। তাদের অভিযোগ, হরণ করা হলো জনগণের অধিকার। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিকে নিয়ে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সরকারও। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গেলো কয়েক বছর অনেকটাই রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে ছিলো জম্মু-কাশ্মির। কিন্তু সেখানকার বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই ফের অঞ্চলটিকে ঘিরে সরগরম ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন। পক্ষে বিপক্ষে চলছে কথার লড়াই।
দীর্ঘদিন ধরেই ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করে আসছিলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। এমনকি এই অনুচ্ছেদ বিলোপ তাদের ২০১৯ সালের নির্বাচনী তফসিলের অংশও ছিল। আর তাই আসন্ন নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের এ রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিচ্ছে দলটি। তবে রায়টিকে হতাশজনক আখ্যা দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ বলেন, এই সিদ্ধান্তে জম্মু-কাশ্মিরের সাধারণ মানুষ হতাশ। ৩৭০ অনুচ্ছেদ ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আজকের এই দিনে পৌঁছাতে বিজেপির বহু বছর লেগেছে। আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
জম্মু-কাশ্মিরের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, এই রায় আমাদের পরাজয় নয়। এটা গোটা জাতির পরাজয়। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করবো না। সম্মান ও মর্যাদার এই সংগ্রাম চলবে।
এদিকে, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের তুমুল সমালোচনা করেছে পাকিস্তান সরকারও। পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি বলেন, জম্মু-কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় পাকিস্তান স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। কাশ্মীরের জনগণ এবং ইসলামাবাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বিতর্কিত ভূখণ্ডের মর্যাদা নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাদের নেই। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসিকে অসঙ্গতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
তবে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপে সুপ্রিম কোর্টের এ রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।
উল্লেখ্য, বিশেষ স্বায়ত্বশাসনের অধিকার দেয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় জম্মু-কাশ্মিরের নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন তৈরি করার অনুমোদন ছিলো। তবে কাশ্মিরকে একত্রিত করা এবং ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে সমতা আনার অযুহাতে এটি বিলোপ পক্ষে যুক্তি দিয়ে আসছিলো বিজেপি। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সেখানে জমি কেনার বৈধতা প্রদানের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য বদলাতে চায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলটি।
/এআই
Leave a reply