তামাশার নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ: বিএনপির বিবৃতি

|

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, তামাশার এই নির্বাচন জনগণের প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয় হয়েছে।

রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলে দলটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে অবৈধ সরকারের তোড়জোড়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো শুরু থেকেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে কার্যকর আন্দোলন চালিয়ে আসছে। জনসমর্থনে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রযন্ত্রে নিজের ‘সেট আপে’ জাতীয় নির্বাচন সম্পাদন করতে অনঢ় থাকেন। ফলশ্রুতিতে আন্দোলনরত অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্খা ও দাবিকে অগ্রাহ্য করে তামাশার নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লাগে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়। নেমে আসে স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম-নিপীড়ন-নির্যাতন, বন্দি করা হয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। তবে বিরোধী দলগুলোর ডাকে সাড়া দিয়ে সংহতি জানায় সংগ্রামী জনগণ। ফলে আজকের জালিয়াতির নির্বাচন দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখান করে জনগণ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের বিজয় নিশ্চিত হয়। 

বিএনপি বলছে, আজকের জালিয়াতির নির্বাচনে যেটি উন্মোচিত হয়েছে, তা হলো বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনাকে সম্পূর্ণভাবে অপমান করা। নির্বাচন বলে দাবি করে শাসকদল আত্মশ্লাঘা লাভ করলেও ভোটকেন্দ্রের চরম অনিয়ম ও সহিংসতা ঢাকতে পারেনি তারা। এগুলো স্পষ্ট হয়েছে, যারা সরকারের গোপন আশীর্বাদ পায়নি, সেসব প্রার্থীদের জালিয়াতির অভিযোগে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের হিড়িকে। ভোট কেন্দ্রের ছবি ও ভিডিওচিত্রে নজিরবিহীন ভোট কেলেঙ্কারির খবর প্রতিমুহূর্তে প্রকাশ পেয়েছে। ঢাকার বাইরেও জনশুন্য কেন্দ্রে ভোটারদের নিয়ে আসতে পারেনি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও দলীয় ক্যাডারদের নানা কারসাজি, হুমকি ও কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও।

দলটি বলছে, বিএনপিসহ ৬৩টি গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও দেশের প্রতিটি আসন ও কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ যেভাবে সংঘবদ্ধভাবে কারচুপি ও সংঘাত করেছে, একের পর এক যেসব ছবি, ভিডিও ও তথ্য আমরা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পেয়েছি। তাতে এটিই পুনঃপ্রমাণিত, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়।

বিএনপি আরও বলছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ও দৃঢ় না হলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার প্রমাণ। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের তল্পীবাহক হওয়ায় তারা নির্বাচনের নামে ছিনিমিনি খেলেছে। সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া আর কাউকে দেখেননি। অথচ আরেকজন নির্বাচন কমিশনার বললেন, ৫১ শতাংশ ভোট পড়বে। ভোটগ্রহণ শুরু থেকে কয়েক ঘন্টা পর নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়, ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। পুলিশ প্রধান বলেছেন, যথেষ্ট ভোটার উপস্থিতির সংবাদ পাচ্ছি। এসব বক্তব্য আগাম প্রস্তুতি বলে মনে হয়, এগুলো নির্বাচন শেষে বেশি ভোট ঘোষণা করার পটভূমি।

দলটি বলছে, সকল স্বৈরাচারের রীতিই হলো জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ভোটে ভোটার বেশি দেখানো। গণবিরোধী সরকারের পারিষদবর্গ ও আজ্ঞাবাহী রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে দেশের ১২ কোটি ভোটারের প্রায় সকলেই একযোগে এই প্রহসনমূলক নির্বাচনকে বর্জন করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের এই বীরোচিত অবস্থান মূলত গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিসমূহের চলমান সংগ্রামের প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য গণদাবির সুদৃঢ় প্রতিফলন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধভাবে ও সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছেন, বিএনপি তার জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply