চীনে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে বিয়ে-জন্মহার

|

সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে অভিজাত জ্যাজ মিউজিকের নরম সুর। স্তিমিত আলোয় মুখে মাস্ক পড়ে তরুণ-তরুণীরা খোঁজার চেষ্ট করছেন তাদের জীবনসঙ্গী।

চীনে ‘সাংহাই সিঙ্গেল’ নামে বসেছে ব্যতিক্রমী এই আসর। মুখে মাস্ক পরে পরিপাটি হয়ে নামকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তাসহ নানা পেশার তরুণ-তরুণী অংশ নেয় পাত্র-পাত্রী খোঁজার অভিনব এই আয়োজনে।

চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় দেশটিতে বিয়ে কিংবা পরিবার গঠনের মতো বিষয়গুলো থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণরা। এর মাঝেও যারা আগ্রহী, সংসার চালানোর খরচের কথা ভেবে তারাও চিন্তিত। তাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে নতুন প্রজন্ম।

সেখানে আসা একজন বলছেন, বিষয়টি এমন নয় যে, চীনের তরুণ-তরুণীরা শখ করে বিয়ে করে না। ভালোবাসা, বিয়ে এই বিষয়গুলো একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বর্তমান অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আরেকজনের ভাষ্য, সত্যি বলতে সাংহাইয়ের মতো একটি শহরে জীবন-যাপন অনেক ব্যয়বহুল। একা থাকলে অনেকভাবে খরচ কমানো যায়। কিন্ত সংসার হলে দুজনের ওপরই অনেক দায়িত্ব চলে আসে। সন্তান হলে তো খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এসব বিবেচনা করেই বিয়ে করার সাহস হয় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণদের বিয়ের প্রতি এই অনাগ্রহ শুধু আর্থিক সংকটের কারণেই নয়। বদলেছে বিয়ে নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনাও। বিয়ে বা পরিবার গঠনের ধারণাগুলোকে নতুনভাবে ভাবছেন তারা।

মিশিগান ইউনিভার্সিটির ফ্যামিলি সোশিওলজিস্ট ইউন ঝোউ বলেন, বিয়ের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে তরুণ প্রজন্ম। এমন হতে পারে একটা সময়ে বিয়ে একেবারেই থাকবে না। সিঙ্গেল মাদার বা সিঙ্গেল ডেড ধারণাগুলো তখন খুব সহজ হয়ে যাবে। একসময় অনেকেই মনে করতো, সন্তান না হলে জীবন ব্যর্থ। কিন্তু সেই ধারণাও বদলে গেছে এখন।

দেশটির সরকার তরুণ-তরুণীদের বিয়েতে আগ্রহী করতে আর্থিক প্রণোদনা, ট্যাক্স মওকুফসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও বছর বছর কমছে বিয়ে ও জন্মহার। বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, জনসংখ্যার দিক থেকে ২য় অবস্থানে থাকা এই দেশটিতে চলতি বছর জন্মহার কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির জন্মহারে ঘটলো পতন।

২০২২ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিলো ১৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩শ’ ৩৩। গত বছর যা শূন্য দশমিক দুই শূন্য শতাংশ কমে হয়েছে ১৪২ কোটা ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ৩শ’ ৫২ তে। চলতি বছর দেশটির জনসংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ১৪২ কোটি ৫১ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ’ ৮২তে, যা গত বছরের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কম।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply