বিচারিক প্রক্রিয়ায় একযুগ পার। উচ্চ আদালতের রায় দিলেও খালাস পাননি আসামি। অবশেষে মুক্তির চিঠি কারাগারে পৌঁছে রোববার। কাকতালীয়ভাবে সেদিনই খুলনায় মারা যান কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত আবেদ আলী। আইনি জটিলতা আর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে এমন মৃত্যুকে দুঃখজনক বলছেন, মানবাধিকার কর্মীরা।
দুই পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় শেখ আবেদ আলীর ফাঁসির আদেশ হয়েছিলো ২০০৬ সালে। সেই থেকে কখনো খুলনা আবার কখনো যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন এই কয়েদি। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তাকে খালাস দেন। চার বছর পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল আপিল বিভাগ খালাসের রায় বহাল রাখেন।
মামলা থেকে খালাস মিললেও রায়ের কপি জেলা কারাগারে পৌঁছায়নি। তাই ছয় মাসেরও বেশি সময় কনডেমড সেলে কাটাতে হয়েছে আবেদ আলীকে। বৃহস্পতিবার মানবাধিকার কমিশনের সহায়তায় খালাসের কপি হাতে পায় পরিবার। রোববার সেই কপি নিয়ে তারা যখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন্স সেলে, ততক্ষণে আবেদ আলী সবকিছুর উর্ধ্বে।
আবেদ আলীর মেয়ে নাজমা সুলতানা বলেন, আজ (রোববার) কাগজপত্র আসলো। আমি গাড়িও ঠিক করে রেখেছিলাম বাবাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। কিন্তু রাস্তায় থাকতে আমাকে ফোন করা হয়, তোমার বাবা আর নেই।
আবেদ আলীর স্ত্রী আম্বিয়া থাতু রায়ের কপি সময়মতো না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তারা বলে- টাকা দাও, পয়সা দাও কাড়ি কাড়ি। পাবো কোথায় আমরা। মেলা মেলা টাকা না দিলে তো ওরা সই করবেনা।
বেশ কিছুদিন ধরে কোলন ক্যান্সার বাসা বেধেছিলো আবেদ আলীর শরীরে। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন প্রিজন্স সেলে। আবেদ আলী তত্বাবধায়নে থাকা চিকিৎসক জানান, মুক্ত পরিবেশে সন্তানদের সাথে বাঁচার আকুতি ছিলো তার।
সহকারী রেজিস্ট্রার (সার্জারি) খুমেক ডা. সুব্রত কুমার মন্ডল, রিলিজ পর্যন্ত যেনো বেঁচে থাকতে পারেন এটুকু তার আর্জি ছিলো।
এদিকে, বিষয়টিকে অবহেলাজনিত মৃত্যু বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম বলেন, এ পরিবারটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? অবশ্যই রাষ্ট্রকে তা বহন করতে হবে। রায়টি না আসার পেছনে যারা ছিলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আইনী জটিলতা আর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে আবেদ আলীর মতো করুণ পরিণতি যেন আর কারো না হয় এ আবেদন তার পরিবারের।
Leave a reply