তামিমদের হতাশায় ডুবিয়ে ইমরুলের ব্যাটে কুমিল্লার জয়

|

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের টানা দ্বিতীয় ফিফটির সাথে সৌম্য সরকারের ৪২ রানের ঝলমলে ইনিংসের সুবাদে ১৬১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় তামিম ইকবালের দল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইমরুল কায়েসের অনবদ্য ফিফটির সাথে জাকের আলীর ও ম্যাথু ফর্ডের ক্যামিও ইনিংসে ১ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় কুমিল্লা। সেই সাথে আসরের প্রথম জয় তুলে নিলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ানরা।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ফরচুন বরিশাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে প্রথম উইকেট এনে দেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওপেনিংয়ে নামা এই ব্যাটার আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি দলে সুযোগ পাওয়া প্রিতম কুমার। 

রস্টন চেজের লেগ স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন। তরুণ এই ব্যাটার ৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেনিন তামিম ইকবাল। ১৯ রান করা বরিশালের অধিনায়ককে ফিরিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেজ। এরপর অবশ্য দারুণ জুটি গড়েন সৌম্য ও মুশফিক। 

বরিশালকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন তারা দু’জন। সেটা করতেও পেরেছিলেন অনেকটা। তাদের দুজনের জমে ওঠা জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের বলে বোল্ড হয়েছেন দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা সৌম্য। আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৪২ রানের ইনিংস। ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি শোয়েব মালিক। পাকিস্তানের এই ব্যাটারকে ফেরান খুশদিল শাহ।

মালিকের মতো ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ম্যাথু ফোর্ডের বলে আউট হয়েছেন ৪ রান করে। এদিকে দারুণ ব্যটিংয়ে টানা দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি পেলেন মুশফিক। মোস্তাফিজের বলে টানা তিন চার মেরে ৩৫ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। শেষ ওভারে গিয়ে অবশ্য ৬৩ রানে আউট হন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার হাফ সেঞ্চুরি করলেও ১৬১ রানের বেশি তুলতে পারেনি বরিশাল। কুমিল্লার পক্ষে ৪ ওভারে ৩২ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুটি করে উইকেট পান রস্টন চেজ ও ম্যাথিউ ফর্দ। একটি করে ‍উইকেট নেন তানভির ইসলাম ও খুশদিল শাহ।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটিতে উড়ন্ত সূচনা করে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু মুহূর্তেই যেন বদলে যায় দৃশ্যপট। বরিশালের লঙ্কান স্পিন উইজার্ড দুনিথ ওয়েল্লালাগে এসেই তোলে নেন জোড়া উইকেট। আগের রাতে নিউজিল্যান্ড থেকে উড়ে আসা মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বানিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ। ১৪ বল খেলা রিজওয়ান ১৭ রানে ফেরত যান সাজঘরে। গোল্ডেন ডাকের শিকার তিনে নামা তাওহীদ হৃদয়।

এরপর ইমরুল কায়েসের সাথে জুটিতে লিটন যোগ করেন ৩০ রান। ধীরগতির ইনিংসে দলের টানার চেষ্টায় ব্যর্থ অধিনায়ক লিটন। ১৫ বলে ১৮ করে খালেদ আহমেদের শিকার কুমিল্লার অধিনায়ক। এরপর রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট দখলে নেন ওয়েল্লালাগে। দ্বিতীয় স্পেল করতে এসেই ওয়েল্ললাগে পান সাফল্য। অধিনায়ক তামিমের আস্থার প্রতিদান দেন দারুণ এক ব্রেকথ্রুতে।

উইকেটের আসা-যাওয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে রানের ফোয়ারা ছুটান ইমরুল কায়েস। ইনিংসের ১৪তম ওভারে খালেদ আহমেদকে খরচ করান ১৫ রান। ৩৯ ফিফটি হাঁকিয়ে ইমরুল কায়েস অবশ্য বিদায় নেন ব্যক্তিগত ৫২ রানে। আব্বাস আফ্রিদির লাফিয়ে ওঠে আসা বল খেলতে গিয়ে সহজ ক্যাচে পরিণত হন কায়েস।

অভিজ্ঞ কায়েসের বিদায়ের পর কুমিল্লা সব আশা যখন নিভে যাবার পর্যায়ে, তখনই ত্রান-সাহায্য নিয়ে খুশদিল শাহ আর জাকের আলি অনিকের আগমন। ইমরুলকে যে ওভারে আব্বাস আফ্রিদি আউট করেন সে ওভারের শেষ দুই বলে বিশাল দুই ছক্কা হাঁকান জাকের আলি। ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কোর্টে নিয়ে আসেন কুমিল্লার এই তরুণ ব্যাটার।

শেষ বলে ২২ রানের সমীকরণ দাঁড়ায় খুশদিল আর জাকেরের সামনে। আব্বাস আফ্রিদির ১৯ তম ওভারেই তুলে নেন ৯ রান। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩। শেষ ওভারের প্রথম বলেই খুশদিল স্ট্রাইক নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন। ওভারের বাকি পাঁচ বলের ৪ টি খেলেই জয় নিশ্চিত করে দেন ম্যাথু ফর্ড। ওভারের দ্বিতীয় বলে দুই নিয়ে, পরের দুই বলে হাঁকান ছক্কা ও চার। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল বের করে উদযাপনে মাতেন ফর্ড ও জাকের। এক কথায় রোমাঞ্চকর ও অবিশ্বাস্য জয়।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply