হুমকির মুখে দেশের আকাশসীমা

|

হুমকির মুখে দেশের আকাশসীমা। বিদেশি কোন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ অতিক্রম করলেও; অনেক সময়ই তা জানতে পারছে না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এতে নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। ৪৩ বছরের পুরনো একমাত্র রাডার দিয়েই আকাশপথের নজরদারিতে হিমশিম খাচ্ছে সিভিল এভিয়েশন।

সমুদ্র সীমা ছাড়াও ১ লাখ ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি আয়তনের ভুখন্ড বাংলাদেশের। বিশাল এ আয়তনের আকাশ পথ নজরদারিতে শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মাত্র র‍্যাডার রয়েছে সিভিল এভিয়েশনের। তাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ।

১৯৮০ সালে ঢাকায় স্থাপন করা হয় র‍্যাডারটি। এটি এখন দেশের পুরো আকাশ সীমার নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। একই সময়ে চট্টগ্রামে বসানো আরেকটি র‍্যাডার অকেজো ২০১৭ সাল থেকে। এতে ওপর থেকে সমুদ্র সীমাও নজরদারিতে রাখা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে গ্রুপ অ্যাভিয়েশন অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন ( অব.) মফিজুর রহমান বলেন, র‍্যাডারটির দুটি ভাগ রয়েছে। একটি প্রাইমারি ও অন্যটি সেকেন্ডারি সারভেলেন্স। প্রাইমারি সারভেলেন্স হল যেকোনো বিমান যাতে শনাক্ত করা যায়। তবে সেটির পরিসীমা ৭০ থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইল থাকে। অন্যদিকে, সেকেন্ডারি সারভেলেন্স হল এয়ারক্রাফটের ইকুইপমেন্টকে যদি র‍্যাডারের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে টিউন করা হয়, তাহলে অনেক দূরত্ব থেকে দেখা যাবে বিমান। সেটির পরিসীমা ২৭৫ থেকে ৩০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত হবে।

ক্যাপ্টেন ( অব.) মফিজুর রহমান আরও বলেন, তবে র‍্যাডারটি খুব সম্ভবত সার্ভিস করা হয়েছিলো ৩ থেকে ৪ বছর আগে। সেক্ষেত্রে, র‍্যাডারটির প্রাইমারি মোডকে সার্ভিস করা যায়নি। যেটি মূলত ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জ দেয়।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমাদের দেশ সাউথ এশিয়ার মধ্যে একটি অন্যতম এভিয়েশন হাব হবে। তবে অন্যতম এভিয়েশন হাব করতে হলে, অবশ্যই এসব র‍্যাডার আপডেট করতে হবে। বেশিরভাগ পাইলটরা বাংলাদেশের র‍্যাডার সিস্টেম নিয়ে শঙ্কায় থাকেন। অনেক খারাপ অবস্থা র‍্যাডার সিস্টেমের। যেটির ওপর ভরসা করেছে না পাইলটরা।

নিয়ম অনুয়ায়ী, অন্য দেশের উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করলে ‘ফ্লাইং ওভার চার্জ’ বাবাদ ফি পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৫০০ ডলার। কিন্তু র‍্যাডার সংকটের কারণে অনেক সময়ই বাংলাদেশের আকাশ সীমার ফি নিয়ে নিচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার। ফলে আকাশপথের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ক্যাপ্টেন ( অব.) মফিজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৭ সালে র‍্যাডার স্থাপনের পর ২০২৩ সাল পার হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও কমিশন করা হয়নি। যা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সার্ভিস দিতে পারছে না। সার্ভিস দিতে না পারলে, এটিকে সক্ষম বলার কোন সুযোগ নেই। তবে যদি সক্ষমতা থাকতো , তাহলে কেউ দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে ফাঁকি দিয়ে যেতে পারতো না। ফলে সেই টাকাটা পাওয়া যেতো।

এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২টি অত্যাধুনিক র‍্যাডার বসানোর উদ্যেগ নেয় সিভিল এভিয়েশন। এর আগে, ২০২১ সালে সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নে ৭৩০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়।

বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, নতুন র‍্যাডারের সাহায্যে আমরা ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি। তবে শুধু অটোমেশনের কাজ বাকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে, ঢাকা র‍্যাডার যেটি আগেই লাগানো ছিল, সেটির সাথে চট্টগ্রামের র‍্যাডারটির সংযোগ স্থাপন করতে হবে। তার সাথে সাথে কিছু সেন্সর সংযুক্ত হচ্ছে, যেটি আমাদের সারভেলেন্স ও যোগাযোগ বাড়িয়ে দিবে। তারপর আমরা ব্যাপক আকাশসীমা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবো। সেই কাজটুকুই চলছে। আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে কাজটি।

তবে নতুন র‍্যাডার স্থাপন হলেও দেশের উত্তরাঞ্চল, সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকা থেকে যাবে সিভিল এভিয়েশনের নজরদারির বাইরে।

\এআই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply