নাচতে নাচতে নির্বাচনে সুবিয়ান্তো, পেছনে রক্তাক্ত অধ্যায়

|

প্রবোও সুবিয়ান্তো। ছবি: বিবিসি।

আহাদুল ইসলাম:

একটা সময় ছিলো যখন প্রবোও সুবিয়ান্তোর নাম বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ানকে ভয় ধরিয়ে দিতো। হবেই না কেন? ধনী রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ তার। একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ যিনি ইন্দোনেশিয়ার মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার পুত্র সুবিয়ান্তো। তবে, ১৯৫৭ সালে বিতর্কের মধ্যে দেশ ছেড়েছিলেন তার বাবা। বাবাকে অনুসরণ করে শৈশবের এক দশক ইউরোপে নির্বাসনে কাটিয়েছিলেন।

এরপর ফিরে আসেন নিজ দেশে। যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। দ্রুত পদে উন্নীত হয়ে ইন্দোনেশিয়ার অভিজাত বিশেষ বাহিনী কোপাসাসের অধিনায়ক হন। পদোন্নতির সাথে সুবিয়ান্তোর জীবনে আসে এক কালো অধ্যায়। তৎকালীন অশান্ত পূর্ব তিমুরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এই প্রাক্তন বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার, যেখানে তিনি ইউনিটের সদস্য হিসাবে কাজ করেছিলেন।

তিমুরে সামরিক অভিযানে তার সঠিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শত শত মানুষকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত হন তিনি। যদিও হত্যাকাণ্ড কখনও প্রমাণিত হয়নি এবং তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেই এসেছেন। তবে, ২০১৪ সালে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অপহরণের নির্দেশ দেয়া তিনি স্বীকার করেন। তবে শুধুমাত্র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই তা করেছিলেন তিনি।

ঐই ঘটনার পর প্রবোওকে সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এরপর তিনি জর্ডানে স্ব-আরোপিত নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ব্ল্যাক লিস্টেড ছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও তিনি হেরে যান। কিন্তু তার আসল প্রত্যাবর্তন ধরা যায় ২০১৯ সালে। সেই বছর, উইডোডো নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর, সুবিয়ান্তোকে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উইডোডো; তার চির প্রতিদ্বন্দ্বীকে মিত্রে পরিণত করেছেন।

যদিও প্রবোও তার পরাজয়ের পেছনে ক্ষমতাসীনদের প্রতারণা রয়েছে বলে দায়ী করেছিলেন। সেই সময়ে সহিংস বিক্ষোভে আটজন নিহত হয়।

এখন ২০২৪ সাল। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন। এবার উইডোডোর উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন প্রবোও সুবিয়ান্তো। কিন্তু এবারের নির্বাচনী প্রচারণা ভিন্ন আঙ্গিকে করছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায়, তিনি নৃত্য পরিবেশন করেন। তার ডান্স স্টেপ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে বেশ সাড়া ফেলেছে। ইন্দোনেশিয়ার শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষ নাচেছেন সুবিয়ান্তো সেই ডান্স স্টেপে। সবার তাকে আদর করে নাম দিয়েছেন ‘কাডল ডেডি’।

টিকটক ভিডিওতে কার্টুন প্রতিকৃতি হিসেবে ডান্স করছে সুবিয়ান্তো। ছবি: বিবিসি।

সুবিয়ান্তোর ডান্স প্রসঙ্গে ২৫ বছর বয়সী একজন সমর্থক অ্যালবার্ট জোশুয়া বলেন, তিনি বয়সে অনেক বড়। কিন্তু তিনি আমাদের প্রজন্মকে আলিঙ্গন করতে সক্ষম।

প্রবোও’র ভাইরাল ‘ডান্স স্টেপ’। ছবি: আল জাজিরা।

প্রবোও’র টিকটক ভিডিওগুলো ভাইরাল হবার সাথে সাথে, তার প্রতিকৃতির কার্টুনও বের হয়েছে। সমর্থকরা নাচের ভিডিওতে প্রবোর কার্টুন যুক্ত করে আনন্দের সাথে নেচে যাচ্ছেন।

প্রবোও’র ভক্তরা তার প্রতিকৃতির কার্টুন নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করছে। ছবি: বিবিসি।

তবে, নেচে নেচে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক মানুষ। একজন তরুণ ভোটার, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেছেন, তিনি ভীষণ আতঙ্কিত, যদি প্রবো জয়ী হয়। কারণ, অতীত বলে, যদি তিনি কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার সহযোগী হতে পারেন, তাহলে তিনি নির্বাচিত হলে বিরোধী কণ্ঠস্বরগুলিকে নীরব করে দিতে পারেন মুহূর্তের মধ্যেই।

তিনি আরও বলেন, কিউট নাচ কিংবা ‘কাডল ডেডি’ খেতাব একজন যোগ্য নেতা তৈরি করতে পারে না। ভালো নাচলে যদি নেতা হয়, তাহলে সবার উচিৎ বিড়ালছানাকে নির্বাচিত করা।

প্রসঙ্গত, সোশ্যাল মিডিয়া প্রবোর নির্বাচনী প্রচারণার মূল ভিত্তি হয়েছে। মেটার তথ্য অনুযায়ী, তার অফিসিয়াল ফেসবুক এবং অ্যাফিলিয়েটেড অ্যাকাউন্টগুলি গত তিন মাসে বিজ্ঞাপন নাগাদ ১ লাখ ৪৪ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করেছে। যা বাংলাদেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি।

সূত্র: বিবিসি, ব্লুমবার্গ, সিএনএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply