অপূর্ব আলাউদ্দিন:
মাদক মামলায় ৭ বছরের জেল হয় রাজধানী উত্তরার প্রয়াত হাশেম চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুলের। কাগজ-কলমের তথ্য বলছে, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পন করে মাত্র ১১ দিন জেল খাটেন তিনি। এরপর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আছেন মুক্তাবস্থায়।
অথচ বাস্তব ঘটনা পুরোপুরি ভিন্ন। মূল আসামি নাজমুলের পরিবর্তে বদলি জেল খেটেছেন অন্যজন। এখন আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ৭ বছরের সাজা থেকেও অব্যাহতি নেয়ার চেষ্টা করছে মূল আসামি নাজমুল। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ধরা পড়েছে যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজা উদ্ধার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তাৎক্ষনিকভাবে আনোয়ার হোসেন নামের একজন ধরা পড়ে। তবে পালিয়ে ছিলেন আরেক অভিযুক্ত নাজমুল। পরে অভিযোগ প্রমাণ হলে, আদালতের রায়ে দণ্ডিত হন দু’জনই।
পরে আত্মসমর্পণ দেখানো হয় নাজমুলকে। কাগজে কলমে ১১ দিন জেলও খাটেন তিনি। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি নন, তার পরিবর্তে জেল খেটেছেন মিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। যা বেরিয়ে এসেছে যমুনা টেলিভিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানে।
প্রমাণ পাওয়া গেছে, আসামি নাজমুল হাসান আদতে জেলে প্রবেশই করেননি। তার নাম নিয়ে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট আত্মসমর্পনের পর মৌখিক চুক্তিতে জেল খাটেন মিরাজ। এমনকি তাদের দু’জনের বয়সের পার্থক্যও ১০ বছর। নাজমুলের বয়স ৩৩ আর মিরাজের বয়স মাত্র ২৩।
কারাগারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কারাভোগ করা ব্যক্তির নাম নাজমুল। তার গলার বাম পাশে তিল এবং ডান হাতের পৃষ্ঠে কাটা দাগ আছে। উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। আসলে এ সব তথ্যই মিরাজুলের। দুই মাস অনুসন্ধানের পর মিরাজকে ক্যামেরায় কথা বলাতে সক্ষম হয় যমুনা টিভি।
সহজ স্বীকারোক্তি দিয়ে মিরাজ বলেন, ফরিদ নামের একজন তাকে নাজমুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর হয় মৌখিক চুক্তি। প্রলোভোন দেখানো হয়, অঢেল টাকা-পয়সা আর গাড়ি-বাড়ির। এসবের লোভেই নাজমুলের পরিবর্তে জেল খাটেন তিনি।
তবে এসবের কিছুই পায়নি নাজমুল। বদলি জেল খাটার বিনিময় চাইতে গিয়ে উল্টো মামলার শিকার হন আরেক দফা। আবারও জেলে যেতে হয় তাকে।
এ বিষয়ে আসামি নাজমুলের সহযোগী ফরিদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, মিরাজ নামের কাউকে তিনি চেনেন না। নাজমুলকে চিনলেও তিনি কখনও জেল খেটেছে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ফরিদ।
এদিকে মিরাজ যখন মৌখিক চুক্তির অর্থ পাচ্ছেন না তখন মাদকের মামলা থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে প্রায় সব আয়োজন শেষ করে এনেছেন নাজমুল। হাইকোর্টে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রমজান খানের কথা-বার্তাও রহস্যজনক।
আইনজীবীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আপনার এগুলো নিয়ে এতো কী? এসব তো আপনারা প্রমাণ করতে পারবেন না। সব প্রমাণ রয়েছে জানালে তিনি আরও বলেন, এসব জানলেও লাভ নেই। আসামি বের হয়ে গেছে।
তবে বিজ্ঞ আইনজীবীরা এ বিষয়ে বলছেন, এমন ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে দোষী সাবস্ত করে জেলে পাঠানো উচিৎ।
সুপ্রিমকোর্ট কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব এ বিষয়ে বলেন, আদালতের সঙ্গে জালিয়াতি করেছে তারা। এসবের বিচার হওয়া উচিত। তাদেরকে শ্বাস্তি না দিলে এগুলো চলতেই থাকবে।
বার কাউন্সিল নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিছুক্ষেত্রে সনদও বাতিল করা হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, উত্তরায় জমি দখল, রাজউকের প্লট দখল, জাল-জালিয়াতি ও কিশোর গ্যাং পরিচালনাসহ আরও বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে নাজমুলের বিরুদ্ধে। উত্তরা পশ্চিম ও তুরাগ থানার একাধিক মামলার আসামিও তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য নাজমুলের বাসা ও অফিসে গেলেও তিনি দেখা দেননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি তার।
এই খবরের ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন
/এমএইচ
Leave a reply