আলমগীর হোসেন:
লাগামহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশে বিদ্যমান সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে পরিমাণ আরও বাড়বে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন এবং খেলাপি ঋণ কমানো অসম্ভব বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা। ঋণ অনুমোদনে বোর্ডের ক্ষমতা প্রত্যাহারের পরামর্শ তাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। যা আগের বছরের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা বেশি। খেলাপিদের বড় অংশই ইচ্ছাকৃত খেলাপি বলে মনে করেন ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ আসলে একটা ব্যাধি। ভালো ঋণ তো অবশ্যই আছে। এর মধ্যে অনেকেই খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ইচ্ছাকৃত খেলাপি হতে পারে। ব্যাংক কিন্তু চেষ্টা করে ঋণটা যেন খারাপ না হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে— কোনটা ইচ্ছাকৃত আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের জন্য যে সমাধান দেয়া হবে অনিচ্ছাকৃতদের জন্য তা কাজে আসবে না।
এদিকে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ আদায় বাড়ানো ছাড়াও ঘোষণা দেয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। ঋণ পরিশোধে বিদ্যমান সুবিধা প্রত্যাহারের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ হিসাবের ক্ষেত্রেও মানা হবে আন্তর্জাতিক নিয়ম। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে রোডম্যাপ দিয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি রাজনৈতিকভাবে সমর্থন ও পরিবেশ না পায়, তাহলে এটা সম্ভব না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তো সরকারের ঊদ্ধে না।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করতে হবে। ঋণ অনুমোদনে পর্ষদের হাতে ক্ষমতা থাকা উচিৎ নয় বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বোর্ড কেন ঋণ অনুমোদন দেয়? এটা তো তাদের কাজ না, ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কাজ এটি। বোর্ড থেকে এ ক্ষমতা নিয়ে নেয়া উচিত। বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংক তো কাজ করে। তাদের ক্ষেত্রে বোর্ড এসে তো কাজ করে না।
খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার গ্রাহকের সক্ষমতা আরও পর্যালোচনার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
/এমএন
Leave a reply