নূরনবী সরকার:
বেইলি রোডে অগ্নি দুর্ঘটনার পর প্রশাসনের অভিযানের উত্তাপে তটস্থ ঢাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ও এসেছে মন্দাভাব। ক’দিন পর মিডিয়াতে নতুন ইস্যুর চর্চা শুরু হলে এই অভিযান ভুলে যাবে প্রায় সবাই। আসলে কি তাই?
রাজধানীর এক নাগরিক বলেন, এগুলো সাময়িক। সবাইকে দেখানোর জন্য। চার-পাঁচদিন পর এই অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে। দুনিয়াটাই এভাবে চলে, ভাই। মগের মুল্লুক! আরেকজন বলেন, এখন যেভাবে অভিযান চলছে, এটা লোক দেখানো। কিছুদিন পর এটা বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের অতীত ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবেই হয়েছে। এই অব্যবস্থাপনার পেছনে রাজউক, ডিএনসিসি ও প্রশাসনকে দায়ী করেছেন কেউ কেউ।
নিমতলি, চুড়িহাট্টা, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার; কত কত প্রাণ আর সম্পদ পুড়ে ছাই হয় অগ্নি দুর্ঘটনায়। বরাবরই নগর পরিকল্পনাবিদরা বলে থাকেন, অবহেলাজনিত মৃত্যুর দায় সরকারের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থার। সেই দায় ঢাকতে ক’দিন অভিযান, আবার স্বাভাবিক, ফের দুর্ঘটনা, আবার আলোচনা; এভাবেই চলে। তবুও ঠিক হয় না অগ্নি বা ভবন পরিচালনার প্রোটোকল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, এখন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে কোনো একটা ঘটনা ঘটার পর। এটা কোনো টেকসই পদ্ধতি নয়। অথরিটি বা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতি সমর্পিত দায়িত্ব পালন করে না। তাই তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে এখন তারা মালিকপক্ষের ওপর অনেক বেশি চড়াও হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কোথায় গলদ, ঠাওর করা যায় কি? প্রশাসন, নাকি জনগণ? এটার জন্য কোথা থেকে শুরু করতে হবে? কীভাবে হবে এই অভিযান পরিচালনা?
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, যৌথভাবে প্রটোকল তৈরি করে চেকলিস্টের মাধ্যমে এই অভিযানগুলো পরিচালিত হতে হবে। বিপদজনক কতোটুকু, তার মাত্রা নির্ধারণ এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবিধান দিয়ে উত্তরণের পথ দেখাতে হবে। তাহলেই এই অভিযান যথার্থ হবে। অন্যথায়, তা হঠকারিতার শামিল হবে। কারণ, এই শহরে মানুষের একমাত্র বিনোদনস্থল রেস্টুরেন্ট। তা কেড়ে নেয়ার অধিকার কারও নেই।
সবারই চাওয়া– নিরাপদ নগর, নিরাপদ জীবন। কিন্তু এর জন্য যে মেহনত, ত্যাগ, বিধিবিধানের প্রতিপালন প্রয়োজন, সে বিষয়ে নাগরিক ও প্রশাসন সবাই যেন ‘হেলায় পার করি বেলা’।
/এএম
Leave a reply