লাভলী বিথী:
শুধু পরিবার সামলানো নয়, নারীরা এখন জাতীয় অর্জনেও অবদান রাখছেন। সেটি হোক রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়া কিংবা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। সমান সুযোগ পেলে নারী-পুরুষ একসাথে সব বাধা মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে উন্নতির শিখরে।
তবে নারীর অধিকার চাওয়ার মানে পুরুষকে প্রতিপক্ষ বানানো নয়। বরং তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ স্বস্তি এবং সহায়ক হতে পারে নারীর জন্য। তাই এবারের নারী দিবসে হোক, সমতা নিয়ে সব ভুল ধারণা ও বিতর্কের অবসান।
রাজধানীতে বসবাস করা এক তরুণ বলেন, সমঅধিকারের কথা বলে নারীদেরকে উপরে উঠাতে গিয়ে আমরা তাদেরকে আরও নিচে নামিয়ে ফেলছি। এদিকে এক নারী বলেন, আমার মেয়ে রাতে বাইরে চলাফেরা করুক, তা হয়তো চাইতে পারবো না। সম্ভবত আমি অতটা ভালো নই।
নারী-পুরুষ সমতা বা সমঅধিকার নিয়ে অনেকের মনে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আবার কেউ কেউ তা জানলেও মানতে নারাজ। অনেকে আবার এ নিয়ে ট্রল করছেন, বিতর্কও করছেন। যারা ট্রল করছেন, তারা কি আদৌ জানেন এই সমতা নিশ্চিত বলতে কি বোঝায়? কোন কোন ক্ষেত্রে এই সমতা চায় নারী-পুরুষ?
এ নিয়ে এক তরুণী বলেন, অনেক জায়গায় পুরুষের পারিশ্রমিক বেশি থাকে। আমাদের কাজকেও তারা সম্মান দিক। আরেক তরুণী বলেন, পরিবেশটাকে যদি নিরাপদ করা যেতো, তাহলে সমঅধিকার নিশ্চিত হতো।
অপরদিকে এক তরুণের ভাষ্য, নারীরা শুধু ঘরের মধ্যে কাজ করবে, আর পুরুষরা অফিসনির্ভর কাজ করবে- এই চিন্তার দেয়াল ভাঙতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সানজীদা আখতার বলেন, সবার আগে শিক্ষা, খাদ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের অধিকার দরকার।
একসময় কাজ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পেশিশক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হলেও এখন সেখানে মেধা, বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-ভাবনা স্থান করে নিয়েছে। ফলে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা মহাকাশ, সবক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা বাড়ছে। তাই বিতর্ক বা প্রতিযোগিতা, পেশিশক্তি বা শারীরিক গঠন নিয়ে কথা হওয়া উচিৎ নয় বলেও মনে করেন ড. সানজীদা আখতার। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের অর্থনীতি-উন্নয়নে, নীতি নির্ধারণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে একই রকম অবদান রাখতে পারবে সবাই।
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো এর বাস্তবায়ন নিয়ে। সমতা নিশ্চিত ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে। এজন্য আলাদা আইন করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, রাষ্ট্র যদি এই বিষয়ে কনসার্ন হতো, তাহলে নারী ও শিশু আইনের মধ্যে একটা ধারা যুক্ত করা যেত। এছাড়া নারীদের হয়রানি রোধ ও সমতায়ন নিয়ে একটি আলাদা আইন হতে পারে।
/এমএন/এনকে
Leave a reply