রেয়াজে বসেছিলেন সন্ধ্যায়, কে জানতো এটাই শেষ সুর সাধনা

|

বিনোদন প্রতিবেদক:

মারা গেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের ধ্রুবতারা রবীন্দ্রসংগীত সাদি মহম্মদ। মৃত্যুর আগে তিনি ইফতার করেছেন। ইফতারে খেয়েছিলেন বেগুনি। ইফতার শেষে নিয়ম মেনে বসেছিলেন রেয়াজে, নিজ ঘরে। সেখান থেকেই তাকে স্বজনেরা পান মৃত অবস্থায়। ওই অবস্থায় তাকে নেয়া হয় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। সেখানকার দায়িত্বরত ডাক্তার স্বাগতিক লোহানী তার মৃত্যুর বিষয়টা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। তার গলায় দাগ ছিল। অনুমান করা যায়, তিনি কোনো কিছুর সঙ্গে ঝুলে মৃত্যুবরণ করেছেন।

সাদি মহম্মদের দীর্ঘদিনের সহকারী সোহেল মাহমুদ জানান, তিনি সবার সঙ্গে ইফতার করেছেন। তারপর নিজ ঘরে গিয়ে তানপুরা নিয়ে রেয়াজ করেছেন। পরে তাকে মৃত অবস্থায় পাই।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর থানার এক কমর্কতা বলেন, আমরা তার বাসায় গিয়ে বিছানায় শোয়া অবস্থায় দেখতে পাই। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে স্বজনেরা জানান। তার গলায় দাগ দেখতে পাই। প্রাথমিক অনুমান তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাদি মহম্মদ মা জেবুন্নেছা সলিমুল্লাহ মারা যাওয়ার পর থেকেই একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান। ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না মানসিকভাবে। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।

শহীদ পরিবারের সন্তান সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী। সাদি মহম্মদ রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এছাড়াও, তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সাদি মহম্মদ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহীদ পিতার সন্তান। তার বাবার নাম শহীদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ, সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদি-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ।

সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুড়িয়ে দেয়া হয় পুরো বাড়ি, গুলি করে মারা হয় সলিমউল্লাহকে।

গত বছরের জুলাই মাসে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ মারা যান। এরপর থেকেই নাকি নানা কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এই সংগীত তারকা।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply