টানা তৃতীয়বারের মতো পিএসএলে ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ হলো মুলতান সুলতান্সের। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলকে ২ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুললো শাদাব খানের ইসলামাবাদ ইউনাইটেড।
শেষ দুই ওভারে ইসলামাবাদের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ক্রিস জর্ডানের ওভারে টানা দুই চার মেরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ইমাদ। সেই ওভার থেকে আসে ১১ রান। শেষ ওভারে দরকার ৮ রান। প্রথম চার বলে ৭ রান নেয়ার পর পঞ্চম বলে ফিরে যান নাসিম। শেষ বলে যখন ১ রান প্রয়োজন তখন থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন হুনাইন শাহ।
২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) শিরোপা জিতল ইসলামাবাদ। আর এদিনের হারে টানা তিন ফাইনাল হারল মুলতান। সবশেষ চার মৌসুমের ফাইনালে উঠলেও একবারের বেশি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের।
করাচিতে জয়ের জন্য ১৬০ রান তাড়ায় আক্রমণাত্বক শুরু করেন কলিন মুনরো। ডেভিড উইলির করা প্রথম ওভারে টানা তিন বলে তিন চার মারেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। মুলতানের পথের কাঁটা হয়ে ওঠার আগেই মুনরোকে ফিরিয়েছেন খুশদিল শাহ। বাঁহাতি এই স্পিনারের মিড উইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন মুনরো। তবে শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ইফতিখার আহমেদ ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলে ১৭ রানে ফিরতে হয় তাকে।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে সালমান আলী আঘাকেও বিদায় করেছেন খুশদিল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করেছিলেন সালমান। তবে ফলো থ্রুতে দারুণ ক্যাচ লুফে নিলে ১০ রান করা সালমানকে ফিরতে হয় খুশদিলের শিকার হয়েছে। এদিকে চারে নেমে থিতু হতে পারেননি শাদাব। ইফতিখারের বিপক্ষে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ইসলামাবাদের অধিনায়ক।
ইনিংসের ১১তম ওভারে উসামা মীরকে দুই ছক্কা ও এক চার মেরে ১৮ রান নিয়ে এসেছেন গাপটিল। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন তিনি। আব্বাস আফ্রিদির স্লোয়ার ডেলিভারিতে এক রান নিয়ে ৩০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন গাপটিল। নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটারকে দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন আজম। তবে নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে গাপটিলকে।
আব্বাসের বলে কভারে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন গাপটিল। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন আজম। তবে বল সরাসরি ইফতিখারের হাতে চলে যাওয়ায় রান নেয়া থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেন পাকিস্তানের এই ব্যাটার। কিন্তু ততক্ষণে উইকেটের মাঝ পথে এসে পড়েছিলেন গাপটিল। স্ট্রাইক প্রান্তে ফেরার আগেই স্টাম্প ভেঙে দেন রিজওয়ান। তাতে ৩২ বলে ৫০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে ফিরে যেতে হয় তাকে।
ইসলামাবাদকে এগিয়ে নিতে থাকা আজমকে রিভিউ নিয়ে ফিরিয়েছে মুলতান। উসামার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করেছিলেন আজম। রিজওয়ান আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার ক্রিস গাফানি। খানিকটা সময় নিয়ে রিভিউ নেন রিজওয়ান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে তা ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ফলে ২২ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় আজমকে। দলকে বিপদে ফেলে বিদায় নিয়েছেন হায়দার আলীও।
উইলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে এজ হয়ে রিজওয়ানের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। নাসিম ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিওতে জয়ের সমীকরণ সহজ হয় ইসলামাবাদের। ‘ক্রাইসিস ম্যান’ খ্যাতি পাওয়া ইমাদ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ১৯ রান করে। মুলতানের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ইফতিখার এবং খুশদিল। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন উসামা, উইলি এবং মোহাম্মদ।
এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মুলতানকে শুরুতেই ধাক্কা দেন ইমাদ। ম্যাচের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারে তিনি বিদায় করেন ইয়াসির খান ও ডেভিড উইলিকে। সেই ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও উসমান খান। তবে ২৬ বলে ২৬ করে রিজওয়ান আউট হন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক শাদাব খানের বলে।
মিডল অর্ডারে জনসন চার্লস, খুশদিল শাহরাও ভালো করতে পারেননি। এবারের আসরে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখানো উসমান অবশ্য জ্বলে ওঠেন ফাইনালেও। তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৫৭ রান। আটে নেমে ইফতিখার আহমেদ করেন তিনটি করে চার ও ছক্কায় ২০ বলে ৩২। ইসলামাবাদ ২০ ওভারে তোলে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান। ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন ইমাদ, পিএসএলে যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। শাদাব খান নেন ৩২ রানে ৩ উইকেট।
ফাইনাল ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম। আর দলকে শিরোপা জিতিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন শাদাব খান। আসরে ১৪ উইকেটের সাথে নবম সর্বোচ্চ ৩০৫ রান আছে ইসলামাবাদ অধিনায়কের।
/আরআইএম
Leave a reply