মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

|

আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের, এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে রেডিও ও টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকারপ্রধান তার ভাষণে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী সব নাগরিককে শুভেচ্ছা ও রমজানের মোবারকবাদও জানান। তিনি তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিস্তারিত তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার অবিসংবাদিত নেতৃত্ব এবং অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা— সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সালাম।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মরণ করে বলেন, সেদিন আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই- বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লে. শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বীর মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

১৯৭৫ পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সব শহীদকে স্মরণ করেন তিনি।

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং ১৯৭৫ এর পর পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করেছে। একইসঙ্গে আমার দল আমাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। দেশবাসীর প্রতি আমার কর্তব্য হিসেবে এবং আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি বারবার এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চেষ্টা করেছি সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর। আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা কোনও অসার বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা প্রমাণ করেছি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়েও একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে কায়েম করে একনায়কতন্ত্র। স্থবির হয়ে পড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জাতির পিতার নেওয়া সব কার্যক্রম। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলাতে বিভোর হয়ে থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একুশ বছরের ইতিহাস এ দেশের মানুষের নিপীড়ন আর বঞ্চনার ইতিহাস। এ সময় লুটপাট, দুর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌল চেতনাকে ধূলিসাৎ করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর এবং পশ্চাৎপদ দেশের তকমা পরিয়ে দেওয়া হয়। নিদারুণ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অকাল মৃত্যু এবং শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসার অভাব ছিল এ দেশের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধারণ মানুষ এসব বঞ্চনাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিতো। তখন মানুষকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে কিছু আছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা শুরু করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, নিরক্ষরতা দূর করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তার, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি আমরা। এই সর্বপ্রথম সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তাদেরও সরকারি সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত পনের বছরের অধিক সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই পনের বছরের অভিযাত্রা একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দেশি-বিদেশি শক্তির নানা ষড়যন্ত্র আমাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে বারবার। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর এবং কয়েক দফা প্রলয়ঙ্করী বন্যা উপকূলীয় এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুধু আমাদের দেশের নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে ধকল কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ আরোপের ফলে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছে। নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি এসব পণ্যের স্বাভাবিক চলাচলও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে গত বছরের শেষে যুক্ত হয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও জনজীবনে কম দুর্ভোগের কারণ হয়নি। ২০১৩-১৪ সময়ে এবং ২০১৬ সালে বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ, অগ্নি-সন্ত্রাস, অগণিত মানুষ হত্যার মতো নৃশংসতা এখনও জনমনে গভীর দাগ কেটে আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং তার মিত্ররা এবারও হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবার তাদের পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। তবু তাদের হাতে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়।

এসব অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিগত দেড় দশকে আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব রূপান্তর ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অভিঘাত মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব খাতে আজকে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষণীয়। একসময়ের দারিদ্র্য-জ্বরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ।

২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৮.৭ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ২৫.১ থেকে ৫.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। আজ খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এসব সাফল্য এসেছে। শিশু মৃত্যুর হার নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬১ জনে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।

পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, বিভাগীয় শহরগুলোর সঙ্গে চার বা তারও বেশি লেনের মহাসড়ক চালু ইত্যাদি অবকাঠামো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা বেশ আগে থেকেই চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলি। একচেটিয়া বাজার তৈরি করে অধিক মুনাফা যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং প্রায় সমপরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রমজান মাসের শুরু থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রাজধানী ঢাকার অন্তত ২৫টি স্থানে ট্রাকে করে মাছ, মাংস, ডিম এবং দুধ সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

টিসিবি প্রথম পর্যায়ে সারাদেশের ১ কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য সুলভ মূল্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা বিতরণ করছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কার্ডধারী পরিবারের জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিতরণ করছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের ১ কোটি ৬২ হাজার ৮০০ পরিবারের জন্য সরকার এক লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল পাবে।

আমরা এ বছর সরকারিভাবে এবং দলগতভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন নিরুৎসাহিত করেছি। আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী সংগঠন নির্দেশমতো তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গরিব-দুস্থদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে।

রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে এসব পণ্যের দাম কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জন্মের পর থেকেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের লড়াই করে আসছে। এসব লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের স্বৈরশাসন, শোষণ-নির্যাতনের নাগপাশ থেকে মুক্তিলাভ করে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রণয়ন করেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান, যেখানে চার মূলনীতি হিসেবে যুক্ত হয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

১৯৭৫-এর পর আইয়ুব-ইয়াহিয়ার অনুকরণে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে আওয়ামী লীগই প্রথম এগিয়ে আসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে। পরের একুশ বছর আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে গণতন্ত্র এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৮১ সালে ৬ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসার পর ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাকেও বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি এবং কারাবন্দি হতে হয়েছে। আমাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়।

হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনোই ভূলুণ্ঠিত হতে দেবে না। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ আমরা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছি। দেশের সব গণতান্ত্রিক দল এবং সাধারণ মানুষকে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সংবিধানই গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া ও সমুন্নত রাখার সর্বোচ্চ রক্ষাকবচ। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে বা পদদলিত করে কোনও কিছু করার চেষ্টার অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্রকে খর্ব করা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় সংসদকে আমরা রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। স্থানীয় সরকারের সব স্তরে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিগণের দ্বারা স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুগ যুগ ধরে আমাদের এই ভূখণ্ড ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্যবস্তু ছিল। নানা সময়ে বিদেশি শক্তিরা এ দেশ নিজেদের কবজায় নিয়ে শাসন করেছে, সম্পদ লুট করেছে, শোষণ করেছে। কোনোদিনই বাঙালি পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মুক্তিলাভ করে।

কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ওঁৎ পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়।

একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনও তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। কাজেই কান্ডারি হুঁশিয়ার।

বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- জাতির পিতার নির্দেশিত এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনও প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য, যে উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত সাধন করেছি, তা আরও এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যে বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার ৫৪তম দিবসে আসুন, সকল কূটকৌশল-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply