জাপানের একটি ডায়াপার প্রস্তুতকারক কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা দেশটিতে শিশুদের জন্য ডায়াপার উৎপাদন বন্ধ করবে। এর পরিবর্তে প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর ডায়াপার উৎপাদনে মনোযোগ দেবে। আজ বুধবার (২৭ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় ন্যাপি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘ওজি হোল্ডিংস’। খবর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসির।
বিবৃতিতে ওজি হোল্ডিংস জানায়, চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে আসন্ন সেপ্টেম্বরে শিশুদের ন্যাপি তৈরি করা বন্ধ করবে তারা। কোম্পানিটির ভাষ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে শিশুদের ন্যাপি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ওজি নেপিয়া’ বর্তমানে বছরে ৪০০ মিলিয়ন শিশুর ন্যাপি তৈরি করে। ২০০১ সালে যা দাঁড়িয়েছিল ৭০০ মিলিয়নে।
ওজি হোল্ডিংস বলছে, জন্মহার হ্রাসসহ বিভিন্ন কারণে শিশুর ডায়াপারের চাহিদা কমছে জাপানে। অন্যদিকে, গত এক দশকে তাদের উৎপাদন করা শিশু ন্যাপির চেয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াপার বেশি বিক্রি হয়েছে। ২০১১ সালে জাপানের সবচেয়ে বড় ডায়াপার নির্মাতা ‘ইউনিচার্ম’ও এমনটা জানিয়েছিল।
তারা জানায়, বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য স্যানিটারি পণ্যের উত্পাদনকে আরও বৃদ্ধি করা হবে। একইসঙ্গে, নার্সিং হোম ও অন্যান্য পাবলিক সুবিধা সম্বলিত স্থানগুলোতে ব্যবহার করা হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।
বিবিসি জানায়, ২০২৩ সালে জাপানে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৩১, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ কম। এটি ছিল ১৯ শতকের পর জাপানে সর্বনিম্ন জন্মসংখ্যার রেকর্ড। সত্তরের দশকে দেশটিতে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল দুই মিলিয়নেরও বেশি।
এর আগেও জাপানের বেশকিছু কোম্পানি এধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। আর এই সিদ্ধান্তের জন্য তারা কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে জাপানের জন্মহার হ্রাস এবং বার্ধক্যের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিকে।
প্রসঙ্গত, জাপান এখন বিশ্বের অন্যতম বাধ্যক্যপূর্ণ জনসংখ্যার দেশ। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি। গত বছর, ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের অনুপাত প্রথমবারের মতো মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে বরং প্রতিবছর তা কমছে। জনসংখ্যা হ্রাস বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতি দেশটির জন্য একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। আর এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে জাপানে নারীদের সন্তান ধারণের অনাগ্রহ থেকে। সন্তান ধারণে উৎসাহিত করতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জাপান সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা খুব সামান্যই সফলতার মুখ দেখেছে।
চলতি বছর ২৩ জানুয়ারি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, জন্মহার কমে যাওয়ায় তার দেশ ‘সমাজ’ হিসেবে কাজ করতে পারছে না। তিনি যোগ করেন– এটি ‘এখন অথবা কখনোই না’র মতো পরিস্থিতি।
/এএম
Leave a reply