বৈরী আবহাওয়া; কী হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে?

|

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন যে শুধু দক্ষিণ এশিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলো হচ্ছে তা নয়। এতে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ফলরূপ ধুধু মরুভূমির বুকেও দেখা যাচ্ছে নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত। এতে বন্যাসহ বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে শুরু করে দাম্মাম শহরে দেখা গেছে ভারী বৃষ্টিপাত। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরেই এসব এলাকায় চলছে বজ্রসহ বৃষ্টি।

আবহাওয়ার এই নাটকীয় পরিবর্তনের ফলে গালফ কান্ট্রিগুলো নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক এসব ঝড় বৃষ্টিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেখা দিয়েছে বন্যা।

সংযুক্ত আরব আমিরাত আবহাওয়া দফতর বলছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রশ্ন হলো, মরুর দেশে হঠাৎ কেন এত বৃষ্টিপাত? এর জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার ওমানের বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি সর্বোচ্চ খারাপ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সতর্কীকরণ কেন্দ্র। চলমান প্রতিকূল আবহাওয়ায় দেশটিতে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১৬ জনের। এদের মধ্যে বেশিরভাগ স্কুল শিক্ষার্থী। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ বুধবার পর্যন্ত সৌদিআরব, বাহরাইন, কুয়েতে এই পরিস্থিতি চলমান থাকবে।

এ নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন ওয়াশিংটন ডিসির মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের পানি ও জলবায়ু বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের খুব সাধারণ কারণ উল্লেখ করেন। বলেন, উষ্ণ আবহাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের জল বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। এতে তা খুব দ্রুত বাষ্পে রূপান্তরিত হয়ে অধিক বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।

মোহাম্মদ মাহমুদের কথার সাথে মিল রয়েছে বাস্তব পরিস্থিতির। লোহিত সাগর সংলগ্ন সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে দেখা দিয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত।

আকস্মিক এই বন্যা যে শুধু প্রাকৃতিক কারণে হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। এতে রয়েছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ভূমিকা। সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ওপর জোর দিয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাদের আরও ৩০০ বৃষ্টিপাত ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত এমন একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, সেখানে সিলভার আওডায়েড ব্যবহার করে মেঘের অভ্যন্তরে বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর গঠনকে ত্বরান্বিত করা হয়। ফলে বাতাস তাকে অন্য কোথাও উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার আগেই তা মাটিতে পড়ে।

আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘনীভবন প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি না হলে ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে মেঘের ঘনীভবন ঘটানো যায়।

ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ভেসে থাকা মেঘের ওপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলে সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই ক্লাউড সিডিং বলা হয়।

এই আবহাওয়াবিদের মতে, আরব আমিরাতের চেয়ে সৌদিআরব কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের জন্য বেশি উপযোগী। কারণ দেশটিতে জল ধারণের বেশি ভূমি রয়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে আসবে।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply