তেঁতুলিয়ায় দায়সারা প্রাণিসম্পদ মেলা, বরাদ্দের প্রশ্ন শুনে পালালেন কর্মকর্তা

|

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় শুরু হয়েছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী। এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেনারি হাসপাতালের উদ্যােগে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী প্রাণী প্রদর্শনী মেলা। এ মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা খামারিরা তাদের প্রাণী নিয়ে এসে পড়েন চরম বিপাকে। খামারিরা বলছেন, দায়সারাভাবে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ডেকে এনে প্রাণীদের মাত্র ২০ টাকার ঘাস আর এক কেজি ভুসি স্টল প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ প্রাণী প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেনারি হাসপাতাল। রোদ্রের মধ্যে মেলার স্টল করা হয়েছে৷ এই স্টল গুলোতে কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা না করায় বিদেশি জাতের ফিজিশিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুসহ পশু-পাখিরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে খাবার ও পানি না থাকায় প্রাণীরা ক্ষুধার্ত হয়ে ছটফট করতে দেখা যায়। অনেকেই প্রাণীর আকুতি সহ্য করতে না পেরে রাগের মাথায় তাদের গরু বাড়িতে নিয়ে যান, আবার অনেক খামারি বাধ্য হয়ে বাজার থেকে ঘাস কিনে আনতে বাধ্য হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেলায় ৫০টি স্টল থাকার কথা থাকলেও স্টল ছিল মাত্র ৪৮টি। এছাড়া একটি স্টলে একাধিক প্রাণী থাকলেও দেয়া হয় ২০ টাকার দরের এক আটি ঘাস ও এক কেজি ভুসি৷ করা হয়নি খাবার পানি সরর্বারহ।

এছাড়া স্টলে দেখা যায় কর্মকর্তাদের পরিচিত লোকদের। মেলায় শুধু একটি ইউনিয়নের খামারিরা অংশ নিয়েছে। প্রচারণা না থাকায় বাকি ৬টি ইউনিয়নের খামিরারা মেলা বিষয় জানেন না। নেই তেমন মানুষের উপস্থিতি। মেলায় আসা গরু খামারিরা এ মেলা ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ব্যানারে দুই দিন (১৮-২২ এপ্রিল) লেখা থাকলেও মেলা বেলা ১১টায় উদ্ধোধন হয়ে দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খামারীরা সকাল সকাল মেলায় অংশ নিলেও তাদের দেয়া হয়নি সকালের নাস্তা৷ দুপুরের খাবারের টোকেন দিলেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার পর ভাতের প্যাকেট দেয়া হয় তাদের। তবে ভাতের সাথে দেয়া হয়নি পানি৷ ফলে পানির অভাবে ক্ষুধার্ত পেটে অনেকেই ভাত খেতে পারেননি। তবে অনেকে প্রাণীর পাশে বাধ্য হয়ে পানিবিহীন ভাত খেতে বসেন। এছাড়াও মেলায় অংশ নেয়া খামারির কোনো কথা শোনা হয়নি বলেও জানান তারা৷

এ বিষয়ে মেলায় অংশ নেয়া খামারি আব্দুর রউফ বলেন, সকালে মেলায় আমার গরু নিয়ে আসলে মাত্র এক আটি ঘাস আর এক কেজি ভুসি ও একটি বালতি দেয়। এত বড় একটা গরুর এই খাবারে কিছুই হয় না৷ নেই পানির ব্যবস্থা৷ ক্ষুধার্ত পেটে গরুগুলো ছটফট করায় আমি বাধ্য হয়ে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

একই অভিযোগ করেন উপজেলা সদরের বাগানপাড়া এলাকা থেকে মহিষ নিয়ে আসা খামারি মো. মমিন। তিনি বলেন, আমাদের মহিষের জন্য যে খাবার দিয়েছে তা দেয়া মাত্রই শেষ হয়েছে৷ না খেয়ে মহিষগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে৷ কেউ এসে খবরও নেননি৷

এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইউনুস আলীর কাছে মেলার অব্যবস্থাপনা, খামারিদের দুর্ভোগের কথা ও মেলায় অংশ নেয়া খামারিদের জন্য বরাদ্দের কথা জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন এড়িয়ে ক্যামেরা থেকে সরে গিয়ে মঞ্চে উঠে বসে থাকেন৷ তবে আয়োজনের সাথে দায়িত্ব প্রাপ্তরা বলছেন মেলার যাবতীয় বিষয়ে তদারকি করেন এই কর্মকর্তা৷

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো খামারিরা যেন গরু, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণী সম্পদ পালনে আগ্রহী হয়। সরকারের যে বিভিন্ন প্রণোদনা আসে এগুলো যেন তাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে সে জন্য এই মেলা৷ আমরা খামারিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনলাম আমরা চেষ্টা করব এগুলো সমাধান করার।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply