আহাদুল ইসলাম:
৭০৫ সালের কথা! তখনকার জাপানের সম্রাট তেনজির ঘনিষ্ঠ এক সহযোগীর একমাত্র সন্তান ছিলেন ফুজিওয়ারা মাহিতো। বাবার কাজের কারণে রাজদরবারে ছিল তার যাওয়া-আসা। হঠাৎ একদিন তিনি দেখলেন, পান্থশালায় বিশ্রাম নেওয়া কয়েকজন মুসাফির গল্প করছেন। সেই সাথে প্রকৃতির অবিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। মাহিতো ভাবলেন, ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ফুজি পর্বতের অদূরে একটি পান্থশালা নির্মাণ করলে কেমন হয়?
সেই ভাবনা নিয়ে মাহিতো একদিন সময় করে বাবার সঙ্গে আলোচনা করলেন বিষয়টি নিয়ে। সম্মতি পেলেন বাবার। তবে লাগবে সম্রাটেরও অনুমতি। কিছুদিন যেতে না যেতেই পেলেন সম্রাটের অনুমতি। এরপর যেমন কথা, তেমনি কাজ। কিছুদিনের মধ্যে সেখানে গড়ে ওঠলো মনোমুগ্ধকর ছোট্ট এক সরাইখানা। প্রকৃতির মনোরম রূপ-লাবণ্যে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকলো এ হোটেলে। সেই সাথে জাপানের ধনী অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এমনকি সম্রাটও এসে হাজির হোটেলে। ধীরে ধীরে হোটেলটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।
সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলে নিশিয়ামা ওনসেন কিওনকান হোটেল। কিয়ান যুগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ হোটেলের একপাশ দিয়ে বয়ে চলা সুন্দরী নদী যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে হোটেলের মোহনীয়তা। অন্যপাশে পাহাড় ও ঘন জঙ্গল বিভিন্ন ঋতুতে পরিবর্তন আনে তাদের মোহনীয় রূপে। বাহারি রঙের বিকিরণে ঝলসে দেয় হোটেলে আগত পর্যটকদের চোখ ও হৃদয়।
হোটেলটির নির্মাতা ফুজিওয়ারা মাহিতোর মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫২ প্রজন্মের হাতে পরিবর্তিত হয়েছে হোটেলের কার্যভার। এভাবে এখনো চলমান রয়েছে ঐতিহ্যের ধারক এই হোটেলের পরিচালনার কাজ। নবীনদের হাতে হোটেলের দায়িত্বভার আসার পর সংস্কারও হয়েছে বেশ কয়েকবার।
শেষবার হোটেলটির সংস্কার কাজ হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। সেসময় নতুন রূপে সংযোজন হয় বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা। যেমন, হোটেলের গরম পানির ঝর্ণার গোসলখানা, মেডিটেশন কক্ষ, অতিথিদের হাঁটা ও বসার জায়গায় প্রদান করা হয় আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে, বেশিরভাগ স্থান এখনো রাখা হয়েছে পূর্বসূরিদের তৈরি করা অভিন্ন আকৃতিতে।
২০১১ সালে প্রায় ১৩১৮ বছর পূর্বে তৈরি হওয়া এ হোটেলটি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন হোটেল হিসেবে জায়গা করে নেয় গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। ঐতিহাসিক এ হোটেলে এখনো পর্যটকরা আসে অবসর-বিনোদনে, রোমাঞ্চকর কক্ষে রাত্রিযাপনে।
অতিথিদের জন্য হোটেলে মোট ৩৭টি ঘর আছে। কয়েক বছর আগে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে প্রতি ঘরেই আলাদা করে উষ্ণ প্রস্রবণের পানির যোগান দেয়া যায়। যাতে অতিথিরা ‘হট স্প্রিং বাথ’-এর সুবিধে নিতে পারেন নিজেদের ঘরে থেকেই। বর্তমানে এই হোটেলে এক রাত কাটাবার জন্য ন্যূনতম খরচ বাংলাদেশী টাকায় ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে দাম কম থাকলেও, জুন মাসে বাড়তে পারে টাকার অঙ্ক।
সূত্র : দ্য জাপান টাইমস, সিএনএন নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
Leave a reply