পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদ ও রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। তবে জনাথন ক্যাম্পবেল ও ব্রায়ান বেনেটের চল্লিশোর্ধ রানের ওপর ভড় করে ১৩৮ রানের পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। এরপরই দ্রুতই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাওহিদ হৃদয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৯ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেলো নাজমুল হাসান শান্তর দল।
রোববার (৫ মে) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৫ রানেই ওপেনার তাদিওনাশে মারুমানির উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাসকিন আহমেদের শেষ বলে অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন মারুমানি। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। মাঠের আম্পায়ার সাড়া না দেয়ায় রিভিয় নেয় বাংলাদেশ। থার্ড আম্পায়ার তাকে আউট দেন। ফলে ২ রান নিয়েই ফিরতে হয় জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটারকে।
এরপর ৭.১ ওভারে দলীয় ৩০ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার জয়লর্ড গাম্বি। ৩০ বলে ১৭ রান করে ফিরতে হয় তাকে। দশম ওভারে বাংলাদেশকে জোড়া উইকেট এনে দেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। সিকান্দার রাজা চড়াও হতে চেয়েছিলেন তাকে। এক্সট্রা ডিপ কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লিটন দাসের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কে। এরপর উইকেটে আসেন ক্লাইভ মাদান্দে।
তিনি এক বল পরেই ফুল লেংথের ফলে স্লিপে তানজিদ হাসান তামিমকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন শূন্য রানে। একপ্রান্ত ধরে খেলছিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার ক্রেইগ আরভিন। তবে তিনিও ধৈর্য্যহারা হয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন। শেখ মেহেদীর বলে রিভার্স সুইপ করে চার মেরেছিলেন তিনি প্রথম বলেই। পরের বলে আভার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ডিপ এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন লিটনকে। ফলে ১৬ বলে ১৩ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটারের ইনিংস।
এরপরই জিম্বাবুয়ের দৃশ্যপট বদলে দেন রায়ান বেনেট এবং জোনাথন ক্যাম্পবেল। দুজন মিলে গড়েন ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি। তবে দলীয় ১১৫ রানে ২৪ বলে ৪৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে আউট হন ক্যাম্পবেল। ক্যাম্পবেলের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই সাজঘরে ফিরে যান লুক জংবি। শেষ দিকে বেনেটের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। ২৯ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন বেনেট।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ মাত্র ১৮ রান খরচায় নেন ২ উইকেট। ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেছেন রিশাদ হোসেনও। একটি করে উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদি, শরিফুল ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। প্রথম ওভারে রিচার্ড এনগারাভার লেংথ ডেলিভারিতে চার মারার পরের ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানিকে স্কুপ করে ছক্কা মেরেছেন উইকেটকিপারের মাথার উপর দিয়ে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে এনাগারাভার বলে পুল করেও চার মেরেছেন লিটন। অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। তাদের দু’জনের ছন্দময় ব্যাটিংয়ে বাঁধা হয়ে আসে বৃষ্টি।
ইনিংসের ৫.১ ওভারের সময় বৃষ্টি বাগড়া দিলেও খুব বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকেনি। বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হওয়ার পরই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার আগে আইসলে এনদোলোভুর লেংথ ডেলিভারিতে স্লগ সুইপে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন তানজিদ। মিড উইকেট থেকে দৌড়ে এসে ব্রায়ান বেনেট দারুণ ক্যাচ লুফে নিলে বাঁহাতি এই ওপেনারকে সাজঘরে ফিরতে হয়। অভিষেকে অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস খেলা তানজিদ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ফিরেছেন ১৮ রানে।
শুরুটা ভালো করলেও সময় যত বাড়তে থাকে ততই ধীরগতির ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন। তিনে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তও হাঁটছিলেন রয়েসয়ে। আরও একবার বৃষ্টি নামার আগে একই ওভারে সাজঘরের পথে হাঁটেন লিটন ও শান্ত। লুক জঙ্গওয়ের বলে লং অনে থাকা রায়ান বার্লকে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ১৬ রান করা শান্ত ফেরার ওভারে অফ স্টাম্পে পড়ে জঙ্গওয়ের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে লিটন ক্যাচ দিয়েছেন জোনাথান ক্যাম্পবেলের হাতে।
রানখরায় ভুগতে থাকা লিটন আশা দেখিয়েও আউট হয়েছেন ২৫ বলে ২৩ রানে। ১১ ওভার শেষে বৃষ্টি আইনে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে থাকেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিক। যদিও জুটি বড় হতে দেননি এনাগারাভা। বাঁহাতি এই পেসারের স্টাম্পের বলে একটু সরে গিয়ে অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন জাকের। তবে বলের লাইন মিস করে ডানহাতি এই উইকেটকিপার বোল্ড হয়েছেন এক ছয়ে ১৩ রানে। শেষ দিকে হৃদয় ৩৭ এবং মাহমুদউল্লাহ ২৬ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছেন।
/আরআইএম
Leave a reply