মাতৃভূমিতে বাবা-মা আর স্বজনদের দিন কাটছে তাবুতে। প্রচণ্ড গরম আর পানির অভাবে সবাই জন্ডিসে আক্রান্ত। ছ’মাস আগেই সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বোমা। বলছি, এমন একজনের কথা, যিনি দিনের পর দিন নির্ঘুম কাটাচ্ছেন এই ঢাকায়। প্রতিদিনই জানতে চান, ফিলিস্তিনে কি বেঁচে আছেন বাবা-মা? ঢাকা মেডিকেলে পড়ুয়া গাজার সন্তান ইব্রাহিম কিসকো’র সঙ্গে কথা বলেছে যমুনা নিউজ।
ইব্রাহিমের সাথে কথা বলে জানা গেল পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা। কথায় উঠে এলো তার মনের উদ্বেগ। নিরুপায় এক অবস্থার মধ্যেই বাংলাদেশে নিত্য-বসবাস ইব্রাহিম কিসকোর।
ফিলিস্তিনি এই শিক্ষার্থী যমুনাকে বলেন, তাবুতে দিন পার করছে আমার পরিবার, গরম আর পানির কারণে তারা প্রায় সকলেই জন্ডিসে আক্রান্ত। তাবুতে বিদ্যুৎ নেই, নেই ফ্যানের কোনো ব্যবস্থা। ফজরের নামাজের সময় আমার পরিবার খাবারের পানি সংগ্রহের জন্য বের হয়। গত চার মাস ধরে তাদের ভাগ্য ভালো খাবার জোটেনি।
বাবার আস্থার দুই চোখ, মায়ের মমতামাখা মুখ আর স্বজনদের চার মাস আগে দেখেছেন ইব্রাহিম। সেটাও ছিল ভিডিও কলে। তিনি বলেন, তিনদিন আগে পরিবারের সাথে কথা হয়েছে। ইন্টারনেটের অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবার যদি সীমান্তের পাড়ে যায় তাহলে কথা বলার সুযোগ হয় আমাদের। চার মাস ধরে তাদের মুখ দেখার সুযোগ হয়নি আমার। ৩০ অক্টোবর আমার বাসায় বোমা হামলার মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কাছের ও দূরের মিলিয়ে পরিবারের ৭৫ জন সদস্যকেই মেরে ফেলেছে তারা। এর মধ্য তিন জন আমার আপন চাচাতো ভাই।
ডাক্তারি পড়ুয়া এই যুবক বলনে, একেকটা ফোন কল যেন গাজায় রকেট-মর্টারের শব্দ। পরিবারের চিন্তায় অস্থির কাটে প্রতিটি ক্ষণ। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাকে। ফোন আসলে আঁতকে উঠি। নিজেকে দোষী মনে হয় আমার। কারণ আমার ভাইদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না আমি। বাংলাদেশে আমি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেলেও আমার পরিবার খাবারের জন্য যুদ্ধ করছে।
বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই ফিলিস্তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রতি মুহূর্তে তারা আমাদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি আমি।
মানুষ বাঁচে আশায়। ইব্রাহিমও আশায় আছেন, স্বপ্ন দেখেন স্বাধীন ফিলিস্তিন।
এটিএম/
Leave a reply