জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে কতটা প্রস্তুত হলো লিটন-শান্তরা

|

আর মাত্র ২০ দিন বাকি, এরপর পর্দা উঠবে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ-২০২৪ এর। ছোট ফরম্যাটের এই বৈশ্বিক আসরের উন্মদনা এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। একে একে দল ঘোষণা করছে আসরে অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়া দলগুলো। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা দল ঘোষণার করাদের মধ্যে অন্যতম।

তবে এই আসরে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশ এখনও দল ঘোষণা করেনি। ফলে কারা লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করবেন সেটি জানতে এখনও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে টাইগার ভক্তদের। ঘরের মাঠে রোববার (১২ মে) পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজের প্রথম চারটি ম্যাচে জয় পেলেও শেষ ম্যাচটি ৮ উইকেটে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণায় জিম্বাবুয়ে সিরিজ প্রভাব রাখবে, সেটি অনুমেয়ই। কেননা, সিরিজটিকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই সিরিজের পারফরমাররা যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজের টিকিট পাবেন, সেটি বোর্ড কর্মকর্তা ও নির্বাচক প্যানেলের কথাবার্তায় বেশ স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন উঠছে, জিম্বাবুয়ের এই সিরিজে বিশ্বকাপের কতটা প্রস্তুতি সারতে পারলো বাংলাদেশ? জিম্বাবুয়ে এবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তুলনামুলক খর্বাকার বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে খেলতে গিয়েও লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনের। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ও স্লো স্ট্রাইক রেট আবারও সামনে উঠে এসেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাটিং লাইনের অন্যতম ভরসা ধরা হয় ওপেনার লিটন কুমার দাস ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। লিটন দাসের ব্যাটে বেশকিছু ধরেই রান নেই। সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজেও ছিলেন বাজে ফর্মে। ওই সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দল থেকে বাদও পড়েছেন। শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজেও ব্যর্থ এই ব্যাটার। প্রথম তিন ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ দুইম্যাচে একাদশে সুযোগই পাননি এই ডানহাতি।

লিটন দাস তিন ম্যাচ ব্যাট করে রান করেছেন মোটে ৩৬। গড় মাত্র ১২। বল মোকাবিলা করেছেন ৪৩টি। প্রথম ম্যাচে তিন বল খেলে করেছেন মাত্র একরান। দ্বিতীয় ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ বলে ২৩ রান। ৯২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা লিটন এ ম্যাচে দুইটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। অর্থাৎ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ১৪ রান। বাকি ৯ রান করার পথে তিনি খেলেছেন ২২টি বল। তৃতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ লিটন খেলেন ১৫ বলে ১২ রানের ইনিংস। দুইটি চারের মার তার ব্যাট থেকে এলেও বাকি ১৩ বল মোকাবিলায় মাত্র চারটি সিঙ্গেল খেলতে পারেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। এছাড়া দ্বিতীয় ম্যাচে টানা তিন বলে একই শট খেলে উইকেট বিলিয়ে এসে বেশ সমালোচিত হয়েছেন লিটন।

অধিনায়ক শান্তও এই সিরিজে ফর্ম দেখাতে পারেননি। রান খরার সাথে তার স্লো ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট নিয়েও রয়েছে অসংখ্য প্রশ্ন। সিরিজের পাঁচ ম্যাচে ব্যাট করে শান্ত রান করেছেন মাত্র ৮১। ১০০-এর একটু ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা শান্ত বল মোকাবিলা করেছেন ৭৮টি। প্রথম ম্যাচে শান্ত ২৪ বলে করেছিলেন ২১ রান। একটি চার মেরেছিলেন তিনি। অর্থাৎ ওই ম্যাচে তার খেলা বাকি ২৩ বলে এসেছে ১৭ রান।

দ্বিতীয় ম্যাচে ১৫ বলে খেলেন ১৬ রানের ইনিংস খেলেন শান্ত। ওই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল একটি চারের মার। তৃতীয় ম্যাচে ৪ বলে ৬ রান এবং চতুর্থ ম্যাচে ৭ বলে করেছিলেন মাত্র দুই রান। তবে শেষ ম্যাচে কিছুটা ফর্মে ফেরার আভাস পাওয়া গেছে শান্তর ব্যাটে। এই ম্যাচে ২৮ বলে খেলেছেন ৩৬ রানের ইনিংস। এই ইনিংসে ১২৮ দশমিক ৫৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা শান্ত ৫টি চার ও একটি ছয় মেরেছেন।

এই তো গেল শান্ত-লিটন ফিরিস্তি! দলগত ব্যাটিং নিয়েও রয়েছে অস্বস্তি। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে মাত্র ১২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ১৫ দশমিক ২ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে হয়েছে স্বাগতিকদের। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৯ রান তাড়া করতে লেগেছে ১৮ দশমিক ৩ ওভার। তবে তৃতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ে কিছুটা সাবলীল ছিলেন টাইগার ব্যাটাররা। ওই ম্যাচে আগে ব্যাট করে তুলেছিল ১৬৫ রান।

তবে সিরিজের সবচেয়ে হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখা গেছে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে। লিটনের বদলে এই ম্যাচে একাদশে ফেরা সৌম্য সরকারকে নিয়ে শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ১১ ওভারেই ১০০ পার করে বাংলাদেশ। ইনিংসের ১১ দশমিক ২ ওভারে দলীয় ১০১ রানে বিদায় নেন তামিম। এরপরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। শেষ পর্যন্ত ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতকে ১৫৭ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় সফরকারীরা।

ব্যাটিংয়ে খুব একটা আলো না ছড়াতে না পারলেও এই সিরিজের সবচেয়ে বড় পাওয়া হতে পারে সাইফউদ্দিনের ফেরা। দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন এই পেস অলরাউন্ডার। গত বিপিএলের মতো এই সিরিজেও নিজেকে মেলে ধরেছেন ফেনীর এই তারকা। চার ম্যাচে খেলার সুযোগ পাওয়া এই পেসার শিকার করেছেন ৮ উইকেট। প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানেই শিকার করেন তিন উইকেট। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে খরুচে হলেও ঠিকই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন। এরমধ্যে তৃতীয় ম্যাচেও তিন উইকেটের দেখা পান। যদিও চার ওভারে ৪২ রান দিয়েছিলেন তিনি।

এই সিরিজে সুযোগ পাওয়া তানজিদ হাসান তামিম দুইবার অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন। রিয়াদ-হৃদয়ও ফিরেছেন রানে। এতকিছুর পরও প্রশ্ন থেকেই যায়- বিশ্বকাপের জন্য শান্ত-লিটনরা কতটুকু প্রস্তুতি সারলেন এই সিরিজ থেকে?

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply