মানুষের নব্বই দশকে ফিরতে চাওয়া ও ‘তুফান’

|

মেহেদী হাসান রোমান

ফ্যাশনের চক্রাকারে আশির দশকের বেলবটম প্যান্ট ফিরে এসেছে আবার। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ফ্যাশন নাকি রিস্টার্ট হয় বারবার। আশেপাশে খেয়াল করলে দেখা যায় নতুন শতাব্দির প্রথম দুদশকে আঁটসাঁট আউটফিট কিংবা চুলের লেন্থ কমে গেলেও তা আবার বাড়ছে। এখনকার প্রেমিকাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্ষেপের সুরে লিখতে দেখা যায়, নব্বই দশকের একটা মানুষ চাই। প্রেমিকদের ক্ষেত্রেও তাই। তাদের নাকি ওয়েস্টার্ন ফ্লেভারের বেশে থাকা একটি মেয়ের চেয়ে নব্বই দশকের লাবন্যময়ী প্রেমিকা পছন্দ, যার চোখে কাজল আর ঈষৎ ঢেউতোলা খোলা চুলে কানের পাশে গোঁজা একগুচ্ছ ফুল থাকবে।

ছাদের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে প্রায়ই ব্যাকডেটেড কিংবা সময়ের উল্টো স্রোতে গিয়ে আমরা সেই স্টাইলে ছবি তুলতে চাই। আধুনিক যুগ এটিকে নাম দিয়েছে ভিনটেজ, ক্ল্যাসিক কিংবা হালের অতি পরিচিত শব্দ অ্যাসথেটিক।

এখন প্রশ্ন হলো, মানুষ কেনো আশি-নব্বইয়ের দশকে ফিরতে চায়? যেসব ছেলেমেয়ের জন্ম ২০০০ সালের পরে তারাও নব্বইয়ের দশকে ফিরে যেতে চায়। তারা তো সেই সময় কোনোদিন দেখেনি। তাহলে কী এমন ঘটলো যার জন্য আগের শতকের নাইন্টিজ প্রেম উঁকি দিচ্ছে নতুন শতাব্দীতে এসে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (বিশেষ করে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে) রিল বা ছোট ভিডিও লক্ষ্য করলে দেখা যায় বিশেষ এক ধরণের ফিল্টার ব্যাবহার করা হচ্ছে আজকাল। যখন ডিজিটাল ভার্সন ছিলো না মুভিতে, তখন ৩৫ মিলিমিটারের রিলে চিত্রধারণ করা হতো। আমরা যখন সেই সিনেমাগুলো দেখতাম তখন স্ক্রিনের ওপরে একধরনের দাগ দেখা যেতো যেটা ক্রমান্বয়ে চলতেই থাকতো। আমরা তখন এটিকেই ‘ছবি’ হিসেবে জানতাম। তখন ফিল্ম কিংবা মুভি শব্দের ব্যবহার খুব একটা ছিলো না। এখনকার প্রজন্ম সাদা-কালোর সাথে স্ক্রিনে দাগ ওঠা সেই ফিল্টারে আশি-নব্বই দশকের মিউজিক ব্যবহার করছে। কেনো করছে? হয়তো তাদের ভালো লাগছে।

আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, ২০১০ সাল পর্যন্তও আজকে যে দ্বিচক্রযানকে আমরা বাইক বলি সেটি পার্শ্ববর্তী দেশে এই নামে ডাকা হলেও আমাদের দেশে মটরসাইকেল কিংবা বহুল পরিচিত শব্দ হোন্ডা বলা হত। এখন রিলসে দেখা যায় আশির দশকের সেই বেলবটম প্যান্ট পড়ে ৮০ কিংবা ১০০ সিসির বাইকের সাথে সালমান খানের ১৯৮৯ সালের মেরে রাং মে, রাংনেওয়ালি…… গান ব্যবহার করে অ্যাসথেটিক একটি ভিডিও তৈরি করছে অনেকে। তারা আবার ফিরতে চাইছে সেই সময়ে।

সিনেমায় প্রিকুয়েল আমরা বুঝেছি চলছি শতাব্দিতে। কিন্তু প্রিক্যুয়েল নয় বলিউড থেকে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও আগের শতাব্দির সেই ভিনটেজ গল্প এখন দেখতে চাইছে সবাই। ঢালিউডে শাকিব খানের তুফান সিনেমার প্লট হলো নব্বই দশকের একজন মাফিয়া। আশি নব্বইয়ের দশক মানে শার্টের কলার থাকবে অনেক বড়, প্যান্ট নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে প্রসারিত। এখনকার দর্শকরাও এমন গল্প দেখতে চাইছে। বলিউডের প্রচুর হাইপ তোলা সিনেমা রয়েছে এমন গল্পের। দাউদ ইব্রাহিমের গল্প নিয়েও মুভি বানানো হয়েছে। এর বাইরে জন আব্রাহামের মুম্বাই সাগা ছিলো এরকম একটি সিনেমা।

হৃত্বিক রোশন অগ্নিপাথের রিমেকে অভিনয় করলেন ২০১২ তে। আশিকি-২ কেবলমাত্র আগের শতাব্দিতে বানানো ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রথম ছবির নায়ক-নায়িকার সেই আইকনিক বৃষ্টিভেজা জ্যাকেটের ছাতা যেনো দর্শক হুমড়ে পড়লো। শাকিবকেও দেখা যাবে তুফানে নব্বই দশকের ফ্লেভারে। দর্শকরা পছন্দ করলে এরকম সিনেমা হয়তো সামনে আরও হবে। একটা দীর্ঘ সময় ফোক ভাইবের ফিল্ম তৈরি হয়েছে ঢালিউডে।

মানুষ ফিরতে চাইছে সেই সময়ে। মানুষের ভালো লাগে সেই সময়ের আবহ। ঢালিউডে সেটি কী শুরু করলো তুফান? আচ্ছা আপনার কি মনে হয়না রয়েল এনফিল্ড বাইকের ডিজাইন সুপার ভিনটেজ যা এখনকার জেনারেশনের পছন্দের অন্যতম কারণ?


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply