দেশে ফিরে যা বললেন নাবিকরা

|

সোমালীয় জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পৌঁছেছে এমভি জাহান মনি-৩। আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বন্দরে পৌঁছায় জাহাজটি।

এর আগে, শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর ছেড়ে আসা জাহাজ এম ভি আব্দুল্লাহ সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় ভেড়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে। সেখানে থেকে ২৩ নাবিককে চট্টগ্রামে আনতে গতকাল রওনা দেয় এমভি জাহান মনি-৩ নামে আরেকটি জাহাজ। আজ সেই জাহাজেই ফিরলেন তারা।

২৩ নাবিককে বরণ করে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসময় নাবিকদের স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন। বন্দরে পৌঁছার পর সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান নাবিকরা। অবশেষে নিজ দেশে ফিরতে পারায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

একজন নাবিক জানালেন, বন্দি অবস্থায় শুরু থেকে আমাদের জীবন নিয়ে টানাটানি ছিল। আমরা সেখান থেকে বেঁচে ফিরব কিনা, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। আমরা সবাই ব্রিজরুমে অবস্থান করছিলাম। আসলে একবার জিম্মি হয়ে গেলে ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আমরা যাতে সহজভাবে থাকতে পারি, তাই ওদের সঙ্গে কো-অপারেট করছিলাম।

তিনি আরও জানালেন, আমাদের কোম্পানি পরিবারের সদস্য মনে করে আমাদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য পরিবারের কাছে আমরা এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পেরেছি। আমরা কেএসআরএম কোম্পানিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের সরকার ও সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই।

দেশে ফেরা এক নাবিক জানাচ্ছেন তার অনুভূতি।

আরেকজন নাবিক বলেন, কী পরিমাণ এক্সাইটেড আমরা, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা যখন ওই সিচুয়েশনে পড়েছি, তখন ভাবতে পারিনি যে, দেশে ফিরতে পারব। এখন ফিরলাম। সকলের দোয়া ছিল আর আল্লাহর অশেষ রহমত ছিল।

এক মা দীর্ঘদিন পর তার নাবিক ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় সন্তোষের কথা জানিয়ে বললেন, তার ছেলের জন্য বাসায় তিনি শিমের বিচি, গরুর মাংস রান্না করেছেন। এগুলো ছেলের প্রিয় খাবার। নাবিক ছেলে মাকে পাশে রেখেই বললেন, জার্নিটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। এখন খুব ভালো সময় যাচ্ছে। মনে হয়েছিল, পরিবারের মুখ আর দেখতে পাব না। এখন সবাইকে দেখছি। ভালো লাগছে অনেক।

এনসিটিতে নাবিকদের সংবর্ধনা দেয়ার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। এরপর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে যে যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন নাবিকরা।

উদ্ধার হওয়া এই ২৩ জন হচ্ছেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি দস্যুদের কবলে পড়ে কেএসআরএম মালিকানাধীন কয়লাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ১৩ এপ্রিল মুক্তিপণ দিয়ে ৩২ দিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয় ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply