সাইফুদ্দিন রবিন:
গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পন্ডের মধ্য দিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সরকার পতনের একদফা আন্দোলন অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনও প্রতিহত করতে পারেনি তারা। নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের দীর্ঘদিন পার হলেও হতাশা কাটিয়ে সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা বলছেন, বাজারে পণ্যের দামে আগুন। কয়েক মাসের মধ্যে বাড়বে নগদ টাকার সঙ্কট। জনগণের ওপর আরও চাপানো হবে বৈদেশিক ঋণের বোঝা।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংসারের (সরকারের ব্যয়) খরচই যেখানে চালানো যাচ্ছে না, সেখানে পাওনাদাররা চাপ দিলে কী অবস্থা দাঁড়াবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেয়ার জন্য টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এই ঋণ জনজীবন ও আর্থিকসহ নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অপরদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয় ৫৫ বিলিয়ন ডলার বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অপ্রত্যাবাসিত রফতানি আয় ১২ বিলিয়ন ডলারের উপরে। অর্থাৎ এই ১২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে আসেনি। এখন বলা হচ্ছে, দেশের নিট রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীনদের ব্যাংক লোপাট, দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে দায়ী করছেন বিরোধী নেতারা।
এ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি ও লুন্ঠনের অবাধ সুযোগ দিয়ে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। এই সঙ্কট তারাই সৃষ্টি করেছে, তাই এটি সমাধানের সক্ষমতাও তাদের নেই।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সম্ভবত সরকার পরোক্ষভাবে মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। নৈতিক শক্তি না থাকায় কেউ সরকারের কথা শুনছে না।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, এই সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় যে ব্যাংকগুলো দেয়া হয়েছে, বর্তমানে সেই ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যসহ যে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে, তা সামনে রেখে বিরোধীদলগুলো সোচ্চার হচ্ছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটকে সামনে রেখেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এমন পরিস্থিতি চলতে দিলে দুর্ভোগ ও অনিয়ম আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। বলেন, কেউ সরকারের কথা শুনছে না, প্রত্যেকেই মনে করে তারা সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে সবসময় জনগণের মনোভাব বুঝতে হবে। তারা কী চায়, তাদের কী সমস্যা ইত্যাদি।
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি, দুর্নীতি ও অর্থপাচার ইত্যাদি ইস্যুগুলো নিয়ে জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেয়া হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থা যে বন্দোবস্তে চলছে, তার বদল ঘটাতে হবে। এটিই দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থনৈতিক সঙ্কট বদলের নিশ্চয়তা।
/আরএইচ
Leave a reply