রিমন রহমান:
কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও আর্থিক খাত প্রসারে দরকার পর্যাপ্ত সরকারি ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ। করোনা মহামারি আসার আগের কয়েক বছরে উৎপাদনের দিক থেকে অন্য এক কাতারে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে ধারাবাহিকভাবে এখন কমছে প্রবৃদ্ধি। সঙ্কটকে জয় করে বিশ্ব যেখানে উৎপাদনে যেখানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেখানে উল্টোপথে বাংলাদেশ।
মোট দেশজ উৎপাদন সেবা, শিল্প ও কৃষি— এই তিন খাতেই কমেছে প্রবৃদ্ধি। সার্বিক অর্থনৈতিক মন্দাই এর নেপথ্য কারণ। তাই আগামী বাজেটে ধরা হচ্ছে সংযত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা। তবে, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাও জরুরি। বলা হচ্ছে, সঠিক নীতি গ্রহণ করে সামাল দিতে হবে মন্দাবস্থা।
এর মধ্যে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু বাজেটে লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রশ্ন হচ্ছে এটাই কি কাম্য?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ম্যাক্রো ইকোনমি যখন স্থিতিশীল ছিল, তখন দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তখন ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চাপ ছিল না। মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। সুদের হার ৮-৯ এর মধ্যে ছিল। কিন্তু পরে নানা নিয়ম-নীতি বেধে দিয়ে এটিকে আরও বাড়ানো হয়েছে। ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেলে ভালো, কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে আগে। স্বস্তির জায়গায় ফিরতে হবে।
এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটও দোড়গোড়ায়। আর এই বাজেটে সংযত ও সতর্ক জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করতে চায় সরকার। কারণ, অনুকূলে নেই সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা। ডলারের সহজ প্রাপ্যতার অভাব, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকের উচ্চসুদ স্থবির করছে সবকিছু।
এ অবস্থায় উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে ১০ শতাংশের ঘরে নিতে হবে মোট দেশজ উৎপাদন, এ কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে যদি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই, তাহলে আর বাকি ৭ বছর। কিন্তু এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ৯-১০ শতাংশ না হলে তো উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবো না।
বিপরীতে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ আসছে। যা হিসেবের বাইরে রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, গ্রামের মানুষেরা ছোটখাটো বিনিয়োগ করছে। মুরগি, হাস ও গরু পালছে। বাড়ির কাজে বিনিয়োগ করছে। এ রকম লাখ লাখ বিনিয়োগ এখন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জিডিপিতে এখন সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে শিল্পখাত। এরপরই সেবা খাতের অবস্থান।
/এমএন
Leave a reply