জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় বাজেট পেশ করা শুরু করেন তিনি। এর আগে, দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রথমবারের মতো এই বাজেট দিতে যাচ্ছেন। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগানে তিনি এই বাজেট উত্থাপন করছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আবারও বাজেটে আসছে, তাই কিছু পণ্যের দাম বাড়বে, আর কিছু পণ্যের দাম কমবে। আসছে অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-করারোপ করতে চায় সরকার। তাই দাম বৃদ্ধির তালিকায় থাকছে মোবাইলের এসএমএস-কলরেট, সিগারেট, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর, কাজু বাদাম, আইসক্রিম, পানির ফিল্টার, এলইডি বাল্ব, গাড়ি কনভার্সন খরচ, ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, মিনারেল লুব অয়েল ও বেজ অয়েল, ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট ও সিলিন্ডার, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইকুইপমেন্ট, ইপিজেডের আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী, কার্বনেটেড বেভারেজ, এমিউজমেন্ট পার্ক, থিম পার্ক ও পর্যটনসহ ইত্যাদি।
দাম বৃদ্ধির কারণ:
এসএমএস-কলরেট: সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় মোবাইল ফোনের এসএমএস ও কলরেটে খরচ বাড়তে পারে।
জ্বালানি খাত: ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, মিনারেল লুব অয়েল ও বেজ অয়েলের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার প্রস্তাব করায় এসব পণ্যের শুল্ককর বাড়তে পারে।
সিগারেট: প্রতিবারের মতো আগামী বাজেটেও সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানো হচ্ছে। তাই সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে।
ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট ও সিলিন্ডার: সিএনজি-এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপন, সিএনজি কনভার্সন কিট, সিলিন্ডার অন্যান্য সরঞ্জামের আমদানি শুল্ক তিন শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করায় এ খাতে ব্যয় বাড়তে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইকুইপমেন্ট: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্রের জন্য ইকুইপমেন্ট ও ইরেকশন ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে শূন্য শতাংশ শুল্ককর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে।
ইপিজেডের আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী: অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা (শুল্কমুক্ত) পরিবর্তে এক শতাংশ হারে শুল্ককর আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর: দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও স্টিল সিটের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটরের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের দাম বাড়তে পারে।
পানির ফিল্টার: পানি পরিশোধন যন্ত্র দেশে উৎপাদন হওয়ায় পণ্যটি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টারের দাম বাড়তে পারে।
এলইডি বাল্ব: এলইডি বাল্ব ও এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। তাই এলইডি বাল্বের দাম বাড়তে পারে।
গাড়ি কনভার্সন খরচ: গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণে গাড়ি কনভার্সন খরচ বাড়তে পারে।
কাজুবাদাম: দেশে কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসাবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।
এসি: আগামী বাজেটে এসিকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই এসির দাম বাড়তে পারে।
ফ্রিজ উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে: বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য খাতকে সরকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। যা আর বৃদ্ধি করা হবে না বলে জানা গেছে। ফলে নতুন অর্থবছরে পাঁচ শতাংশ ভ্যাটের হার বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
জেনারেটর: জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তাই দেশের বাজারে জেনারেটরের দাম বাড়তে পারে।
নিরাপত্তা সেবা: নিরাপত্তাসেবায় ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিদ্যমান। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
হাটবাজারের ইজারা: কর ব্যতীত প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) বাড়াতে আগামী বাজেটে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজারের ইজারামূল্য কিছুটা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে জমির নামজারির মাশুলও (ফি)।
হাসপাতালের সরঞ্জাম আমদানিতে ব্যয় বাড়বে: কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতালের শুল্কছাড় সুবিধায় এক শতাংশ শুল্কে মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ রয়েছে। আগামী বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিকেল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, তাতে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় আরও বাড়তে পারে।
/এমএন
Leave a reply