রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব রুখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে তা উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে বাংলাদেশ গভীর সংকটে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
একদফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলায় কারামুক্তির পর রাজনীতিতে ফের সক্রিয় বিএনপি মহাসচিব। সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ফের চাঙা করতে দল গুছানোর চেষ্টা করছেন। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও সমন্বয় করছেন পূর্বের মতো। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর সাথে রাজনীতির নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সাইফুদ্দিন রবিন।
যমুনা নিউজ: দেশ কেমন আছে?
মির্জা ফখরুল: আমার মনে হয়, দেশ এখন সবচেয়ে খারাপ আছে। দেশের অর্থনীতি একেবারেই তলানিতে এবং রাজনৈতিক অবস্থাও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। দুটো মিলিয়েই দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যারা শাসন করছে, তারা জনগণের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করছে। যা সত্য, তা তুলে ধরছে না। এমনকি সংসদেও তারা সত্য কথা বলে না। যার কারণে সত্যিকার অর্থে বাংলাদশকে এখন আর ঠিক রাষ্ট্র বলা যায় না। জনগণের কোনো দায় দায়িত্ব তাদের ওপর আছে বলে মনে হয় না আমার।
যমুনা নিউজ: তাহলে এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মির্জা ফখরুল: জবাবদিহিমূলক সরকার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাই উত্তরণের উপায়। যে সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে এবং সেই নির্বাচিত পার্লামেন্টের থাকবে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা… তাহলেই একমাত্র জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটাই একমাত্র পথ বলে আমি মনে করি।
যমুনা নিউজ: এই সরকার কি এটা ফিল করছে না?
মির্জা ফখরুল: সরকার ফিল করে না। কারণ, তাদের ফিল করার প্রয়োজন নেই। এখন ক্ষমতায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারা কিন্তু স্বৈরশাসক, উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই করেছে। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় এসেছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া একটা দেশের উন্নয়ন কখনোই টেকসই হতে পারে না।
সবার আগে দরকার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ডেমোক্রেটিক কালচার। যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, মতামত দিতে পারবে। সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারবে। যেকোনো জায়গায় এই স্বাধীনতা থাকতে হবে। সেটাই তো নেই এখন। যার ফলে মানুষ এখন কথা বলতে পারছে না। গণমাধ্যমেও আপনারা সবকিছু বলতে বা লিখতে পারেন না। কারণ, এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়, দেখা যায় আপনারা নিজেরাই সেটা করছেন না। সারাদেশে ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। গুম করা, বিনাবিচারে হত্যা করা, মিথ্যা মামলা দেয়া (এটা একটা বড় হাতিয়ার) ও আদালতকে ব্যবহার করা— এই বিষয়গুলোতে এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, মানুষের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এখন যারা জনপ্রতিনিধি হচ্ছে, তারা তো আসলে জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা নির্বাচন করে আসে না। ফলে জনগণের সঙ্গে বর্তমান শাসন ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে একটা দুঃশাসনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুঃশাসন তখনও ছিল, এখনও আছে।
যমুনা নিউজ: সেই দুঃশাসন থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে বিএনপির করণীয় কী? আপনি বরাবরই বলেন, আগামী দিনে বিএনপিই মূল দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু জনগণকেও তো বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল: আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। গত ১৫ বছর ধরে আমরা এই কাজটাই করার চেষ্টা করছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই পরিবর্তন আনার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবসময় জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করি। আপনারা দেখেছেন, গত বছর অক্টোবরের আগে আমরা আন্দোলন করছিলাম। সেখানে কিন্তু একেবারে তৃণমূল থেকে আন্দোলন হয়ে আসছিল। জনসভা, মিছিল, রোডমার্চ ইত্যাদি করেই জনগণকে সম্পৃক্ত করছিলাম। প্রতিটি জনসভায় আমাদের লোক বাড়ছিল। চট্টগ্রামের রোডমার্চে আমি দেখেছি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া। এরপরেই ঢাকার সমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হলো। আমাদের ওপর সরকারের এই নিপীড়ন নীতিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন পুরোপুরি ব্যাহত হচ্ছে। বাধা আসতেই পারে কিন্তু এটাকে জনগণ ওভারকাম করবেই।
যমুনা নিউজ: এই মুহূর্তে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?
মির্জা ফখরুল: আমাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমি আপনাকে বুঝাতে পারব কি না জানি না। নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন সারাদেশে আমাদের কর্মীদের মধ্যে একরকম হতাশা ভর করছে। সেটা কাটিয়ে ওঠাটাই এখন মূল কাজ। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা রয়েছে, অনেকে সাজাপ্রাপ্ত। সেখান থেকে তাদের বের করা, মুক্ত করাটাই এখন আমাদের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
/এএম/এমএন
Leave a reply