ভিপিএন ব্যবহারের আগে যা জানতে হবে, রয়েছে ঝুঁকি

|

সাম্প্রতিক সময়ে যে সফটওয়্যাররের ব্যবহার বেড়েছে তার একটি ভিপিএন। এর পুরো নাম ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। তবে অনেকেই জানেন না এর ব্যবহার কিংবা সুবিধা ও ঝুঁকি।

মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই ভিপিএন ব্যবহার করা হলেও স্ট্রিমিং, গোপনীয়তা, গেমিং, ভ্রমণ, এবং নিষিদ্ধ সাইট ও কন্টেন্টে অ্যাক্সেস পেতেও ভিপিএন ব্যবহার করা হয়। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়েই বেশি ব্যবহার করা হয়।

ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা ও মানুষের দৈনন্দিন কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষকে হ্যাকারদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছে। ভিপিএনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে সুরক্ষিত করে। যার ফলে হ্যাকারদের পাশাপাশি অন্যত্র চিহ্নিত হওয়া থেকেও তাদের নিরাপদ রাখে। ইন্টারনেট একটি উন্মুক্ত স্থান, যেখান থেকে যে কেউ যেকারও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। ফলে, এমন একটা ঝুঁকি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করার প্রবণতা বেড়েছে, যা ভিপিএন এর ক্রমবর্ধমান বাজারের আকৃতিতেই স্পষ্ট।

ভিপিএনের সুবিধা
ইন্টারনেট নির্ভরশীলতার ফলে দৈনন্দিন সব কাজের সঙ্গে ইন্টারনেট জড়িয়ে গেছে। আর ইন্টারনেটের সঙ্গে জড়িত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)। যাদের কাছে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং বা সার্ফিং তথ্যের সবকিছুতেই অ্যাক্সেস থাকে। গ্রাহক হবার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগতভাবেও চিহ্নিত করতে পারে। ভিপিএন ব্যবহারের ফলে নিজের পরিচয় ও ব্রাউজিং তথ্য গোপন রাখা যায়।

ফোর্বসের মতে, অনেক আইএসপি, অধিকাংশ অ্যাপস এবং ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের কাছে বিক্রি করে না বলে দাবি করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মুনাফার জন্যে তারা তথ্য বিক্রি করে। সরকারের কাছে আইএসপি প্রোভাইডার তথ্য প্রদানে করতে তারা অনেক সময় বাধ্য। তাই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নিজেদের ডাটা সুরক্ষায় ভিপিএন ব্যবহৃত হয়।

ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার। বিভিন্ন কফি-শপ, শপিং-মল, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থানে পাবলিক ওয়াইফাই সুবিধা থাকে। বিনামূল্যে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প না থাকায় ব্যবহারকারীরা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। যেখানে ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড, লগ-ইন ক্রেডেনশিয়ালস, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিবরণ, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য এবং ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্যে হ্যাকারদের কাছে খুব সহজ অ্যাক্সেস প্রদান করে। ভিপিএনের মাধ্যমে এসব থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

চীন, রাশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর বিধি-নিষেধ আছে। এসব দেশের কড়া অনলাইন সেন্সরশিপের ফলে ভিপিএন ব্যবহারের হারও সবচেয়ে বেশি। পর্নোগ্রাফিসহ অনেক ওয়েবসাইট, অ্যাপ, কিংবা কন্টেন্টে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এসব দেশের নাগরিকরা ভিপিএনের মাধ্যমে নিজেদের আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন ও তথ্য এনক্রিপ্ট করে এসব নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ বাইপাস করে।

ভিপিএনের অসুবিধা

মানুষের স্বাধীনচেতা প্রবণতা অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। ইন্টারনেটের দুনিয়ার সব নিষেধাজ্ঞাও ভেঙে ফেলে অগাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ভিপিএন এই সুবিধাটা নিশ্চিত করে। তবে, অবাধ স্বাধীনতার সঙ্গে যে অপরাধের ঝুঁকিও জড়িত। অপরাধীরা এই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী ভিপিএন ব্যবহার করে এমন বহু অপরাধের ঘটনা ঘটে চলেছে। যেখানে অপরাধীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন। ভিপিএনের মাধ্যমে যে সুবিধা ব্যবহারকারী নিচ্ছে, একই সুবিধা গ্রহণ করে অপরাধীরাও তাদের কাজ করে যাচ্ছে। ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য যেহেতু তথ্য গোপন করা তাই সরকারি সংস্থাগুলো চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারে না।

ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ অসুবিধা হল ইন্টারনেট সংযোগের গতি কমে যাওয়া। যেহেতু ভিপিএন বিভিন্ন দুর্গম সার্ভারের মধ্য দিয়ে ডেটা পাঠায় ও ডেটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপ্ট করে, সেহেতু ব্রাউজিংয়ের সময় কম গতি ও বিলম্বের মতো অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে পারেন ব্যবহারকারী। বিশেষ করে এমন সার্ভারের বেলায়, যেগুলোর অবস্থান ব্যবহারকারীর অবস্থান থেকে অনেক দূরে।

খরচের বিষয়: অনেক ভিপিএন গ্রাহক সেবা বিনামূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা গেলেও প্রিমিয়াম শ্রেণির ভিপিএন সেবাগুলোয় বিভিন্ন উন্নত ফিচার ও উচ্চ গতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা মেলে। তবে, এক্ষেত্রে পয়সা গুনতে হয়। বাজেট নিয়ে শঙ্কিত ব্যবহারকারীর কাছে পয়সা খরচ করে গ্রাহক সেবা কিনে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বিলাসিতা মনে হতে পারে, বিশেষ করে তাদের যদি প্রাইভেসি বা ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কনটেন্ট আনব্লক করার তেমন প্রয়োজনীয়তা না থাকে।

জটিলতা ও কারিগরি চ্যালেঞ্জ: একটি ভিপিএন সেটআপ বা কনফিগার করা অনভিজ্ঞ ব্যবহারকারীর কাছে ভীতিকর হতে পারে, বিশেষ করে এনক্রিপশন প্রোটোকল, সার্ভার বাছাই ও ‘টানেলিং’ আলাদা করার মতো বিভিন্ন উন্নত ফিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া, ইন্টারনেট সংযোগে ‘ট্রাবলসশুটিং’, ‘ডিএনএস’ বা ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম’ ফাঁস বা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডিভাইস সেটআপের বেলায় কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তা, এমন বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তুলনামূলক কম প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে।

সেবাদাতার ওপর নির্ভরতা: বিভিন্ন ভিপিএন সেবায় সত্যিকারের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা সুবিধার কথা উল্লেখ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে হাজার হাজার ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ পাওয়া যায়। ব্যবহারকারীর ডেটা যেহেতু ভিপিএন সেবাদাতার হাত দিয়ে যায়, তাই সেবাদাতার সততার ওপর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর তথ্য নিরাপত্তা। অনেক সময় বিনামূল্যের ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহারে তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই  কোন ভিপিএন ব্যবহার করা  হচ্ছে সেদিকে ব্যবহারকারীকে সতর্ক থাকতে হবে।

/এটিএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply