ধ্বংসস্তুপ থেকে লিটন-মিরাজের ব্যাটে বাংলাদেশের স্বপ্নময় দিন

|

ছবি: সংগৃহীত

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে রীতিমতো কুপোকাত হবার দশা তৈরি হয়েছিল। টপ, মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ভয়াবহ ব্যর্থতায় মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের পরও শেষ থাকে, সে কথাই প্রমাণ হলো আরেকবার। পাকিস্তানের যে বোলাররা টুটি চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ ব্যাটারদের, রাওয়ালপিন্ডিতে পরে সেই বোলারদেরই পিন্ডি চটকে দিলো লিটন-মিরাজরা।

সপ্তম উইকেটে রেকর্ডগড়া ১৬৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন লিটন, মিরাজ। সেঞ্চুরির আগে মিরাজ ফিরে গেলেও হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে লিডের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন লিটন। সেই সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন ‘এলকেডি’। শেষ পর্যন্ত লিড নেয়ার একটু আগে ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান লিটন। একই ওভারে নাহিদ রানাও উইকেট দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে থামতে হয় ২৬২ রানে। খুররম শেহজাদের দারুণ বোলিংয়ে ১২ রানের লিড পায় পাকিস্তান।

১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের শেষ ভাগে ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। তাদের লিড এখন ২১ রানের। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি উইকেটই নেন হাসান। নিজের প্রথম ওভারে আব্দুল্লাহ শাফিককে ফেরানোর পর দ্বিতীয় ওভারে তিনি বোল্ড করেন ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা খুররম শাহজাদকে।

এর আগে, তৃতীয় দিন সকালে নেমে পাকিস্তানি পেসারদের তোপে পড়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। মির হামজা আর খুররম শাহজাদের ঝাঁজে ধসে যায় টপ অর্ডার।  বেশ কয়েকবার পাকিস্তানের পেসারদের কাছে পরাস্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন জাকির হাসান। ১৬ বলে এক রান করা এই ওপেনারকে ফেরান খুররম শাহজাদ।

এরপরের ওভারের প্রথম বলে সাদমানকে ফেরান এই পেসার। খুররমের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২৩ বলে ১০ রান করা সাদমান। ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ ১৯ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায়। দলীয় ২০ রানে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুমিনুল হকও।

সাদমানকে ফেরানোর সেই ওভারের চতুর্থ বলে শান্তকেও বিদায় করেন খুররম। তার ফুল লেংথ ডেলিভারিটি ভেতরে ঢোকার সময়ে অন সাইডে খেলার চেষ্টা করে স্টাম্প হারান চার রান করা শান্ত। অষ্টম ওভারে খুররমের জোড়া আঘাতের পর নবম ওভারের প্রথম বলে মুমিনুলকে মিড অনে মোহাম্মদ আলীর ক্যাচ বানান মীর হামজা।

দলের চরম বিপর্যয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ভরসা ছিলেন আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম, কিন্তু হামজার বেরিয়ে যাওয়া বলে কিপারের হাতে জমা পড়েন তিনি। সাকিবও টিকতে পারেননি। খুররমের বেরিয়ে যাওয়া বলে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউতে বিদায় নেন ২ রান করে। ২৬ রানেই পড়ে যায় ৬ উইকেট। জাগে ফলো-অনের শঙ্কা।

এ অবস্থায় ভেঙে পড়াটাই ছিল অনেকটা অনুমিত দৃশ্য। কিন্তু সেটি বদলে দেয়ার কাজটি করেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের জুটিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর এসে দু’জন হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন।  

তাদের জুটি দেড়শ ছাড়ালে রেকর্ড গড়ে ফেলে। ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৫০ রানের জুটি হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই। কিন্তু রেকর্ডের রানকে আর খুব বেশি বড় করতে পারেননি মিরাজ। খুররাম শেহজাদের কিছুটা লাফিয়ে উঠা বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। ১২৪ বলে ৭৮ রান করেন মিরাজ।

এরপর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাসকিনও। ৫ বলে ১ রান করে এলবিডব্লিউ আউট হয়েছেন খুররামের পরের ওভারে। এরপরই চা বিরতির ঘোষণা দেয়া হয়। বাংলাদেশের আশা হয়ে ছিলেন লিটন। মিরাজ না পারলেও তিনি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থেকে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৭১ বলে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি।

দারুণ খেলতে থাকা লিটন শেষদিকে একাই হাল ধরেছিলেন। মিরাজের পর তাকে অনেকটা সময় সঙ্গ দিয়ে গেছেন হাসান মাহমুদ। ৫১ বলে ১৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন হাসান। তবে অপরপ্রান্তে লিটন নবম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন। ২২৮ বল খেলে ১৩৮ রান করেন তিনি। ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো এই ইনিংস। লিটনের পর শেষদিকে নাহিদ রানা (০) দ্রুত বিদায় নিলে আর লিড পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply