স্বৈরাচারের হাতে যেন আর পড়তে না হয়, সেই কাজ করছি: ড. ইউনূস

|

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, আর যেন কোনো স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, আমরা যাতে বলতে পারি একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, সকলেই যাতে দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের— আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।

বক্তব্যের শুরুতে ড. ইউনূস জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতি অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যারা আহত, পঙ্গুত্ব বরণ ও চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন তাদেরকেও স্মরণ করেন তিনি। মিথ্যাচার, লুটপাট, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক দফা দাবি নিয়ে দাঁড়ানো বীরদের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের-ও।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুথানে সকল শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ হবে। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার যাত্রালগ্নে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সকল মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত মাসে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সিলেট অঞ্চলে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে সশস্ত্রবাহিনী। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে একযোগে কাজে নামায় মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও ও সাধারণ মানুষ দেশের সকল অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।  দেশের সকল দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে।  বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক ও অফিসাররা দিনের পর দিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার সহ সকল কার্যক্রমে আপনারা সফলভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।  যে সমস্ত ভাই-বোনেরা তাদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমার অফিস এবং সচিবালয়ের অফিসসমূহের সামনে প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত করছিলেন তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত হয়েছেন বটে, তবে অন্যত্র আবার তারা তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাত ও সৃষ্টি করেছেন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাবো না। আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আবারও অনুরোধ করছি. আপনার যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে তৈরি পোষাক ও ওষুধ শিল্প কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র, শ্রমিক ও ‍জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ ও অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।

সংস্কার চাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ওপর সংস্কারের যে গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করবো। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন।

বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের কথাও জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ নিয়ে তিনি বলেন, এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।

এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি। কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়।

পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর এসব কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যা পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তার ধারণা করছি।

তিনি বলেন, কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেয়া হবে। এই আয়োজন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্র পুনঃনির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের বড় সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। যোগ্যতম ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়াতে মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বলপূর্বক গুম থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছি। ফলে স্বৈরাচার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গুম সংস্কৃতির সমাপ্তি ঘটানোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। এছাড়া আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠন করছি। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ পিতা, স্বামী, পুত্র ও ভাইদের পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণার সাথে অপেক্ষা করছেন, আমরা আপনাদের বেদনায় সমব্যথী। আয়নাঘরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতে যেন উজ্জ্বল হয় সেটা নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থার দিকে আমাদের পূর্ণ নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। আমরা সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

ভারত ও অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় জানি তিনি বলেছেন, সেই সম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। ভারতের সাথে আমরা ইতোমধ্যে বন্যা মোকাবেলায় উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আলোচনা শুরু করেছি । দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অহেতুক কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে দেখেছি যেগুলো কখনোই দেশের মানুষের জন্য ছিল না। বরং এর সাথে জড়িত ছিল কুৎসিত আমিত্ব এবং বিশাল আকারের চুরি। চলমান ও প্রস্তাবিত সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যাচাইবাছাই করার কাজ ইতিমধ্যে আমরা শুরু করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায় বিবেচনা করে বাকি কাজে ব্যয়ের সাশ্রয় এমনকি প্রয়োজনবোধে তা বাতিল করার কথা বিবেচনা করা হবে। দেশের মানুষকে আর ফাঁকি দেয়া চলবে না। কর্মসংস্থান তৈরি  করবে এমন প্রকল্পগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দেবো।  

লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বক্তব্যে তিনি বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই একমাসে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আপনারা নিশ্চয় সেটা লক্ষ্য করেছেন।  আমরা এই খাতে নিয়ম নীতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।  আরো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।  প্রথম মাসের কাজ হিসেবে শুধু প্রধান কাজগুলো করেছি।

তিনি আরও বলেন, অতীতে শুধুমাত্র আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। ৮ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এর মধ্যে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা প্রতি বছর তাদের করতে হবে।

জনপ্রশাসন নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ধ্বংস হয়ে পড়া একটা জনপ্রশাসনকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। মন্ত্রণালয়গুলোর উচ্চতম পদে যারা নিয়োজিত ছিলেন তারা অনেকে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন কিংবা পদে থাকলেও সহকর্মীদের চাপের মুখে কাজ করতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন। আর যারা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের আমলে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন কিংবা দায়িত্ববিহীন অবস্থায় একই পদে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাদের সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে জনপ্রশাসনকে নতুন করে দাঁড় করানোই ছিল আমাদের কঠিনতম সময়। আবার সকল সমস্য সমাধান করে একটি নতুন জনপ্রশাসন কাঠামো দাঁড় করাতে পেরেছি এটাই আমাদের প্রথম মাসের সবচাইতে বড় অর্জন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশকে একটি পরিবেশবান্ধব ও জীববৈচিত্র্যময় দেশ হিসাবে গড়ে তলার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি তরুণদের আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা। সেই লক্ষ্যে আমি প্রথমেই একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার বাসভবন ও সমগ্র সচিবালয়ে প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ইতিমধ্যে সুপার শপ গুলোতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত কয়েক দশকে যে পরিমাণ নদী দূষণ হয়েছে, আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply