আধেক শরৎ শেষ। ভাদ্র মাসের অন্তিম দিন আজ। এসময় বিকেলবেলায় পেঁজাতুলো মেঘের মিছিলে সামিল হওয়ার কথা। কিন্তু হুটহাট করে আকাশ ভেঙে নেমে আসতে পারে জলের শিশু। ঝরে পড়তে পারে কদম বা কাশফুলে।
গতকাল থেকে যেমন মুখ গোমড়া করে আছে শরতের আকাশ। বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির বাহার আর ঝড়ো বাতাস। অথচ দু’দিন আগেও এ শহর পুড়ে হচ্ছিল ছাই হওয়ার উপক্রম।
মুষলধারে বৃষ্টি হলে প্রায়ই ঘর থেকে বের হওয়ার জো থাকে না। সারাদিন ঘরে আবদ্ধ থেকে অনেকেই একঘেয়েমিতে ভোগেন। কিন্তু শরতের বিকেলের এ বারিধারা বৃষ্টিবিলাসীদের প্রিয় মুহূর্ত। ভোজনরসিকরাও ডালি খুলে বসে বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায়। কী করা যায় বৃষ্টির বিকেল থেকে সন্ধ্যায়? কিছু কাজের মাধ্যমে ঘরে বসেই বৃষ্টির দিনটা উপভোগ করা যেতে পারে—
সান্ধ্যনাস্তা
দিনজুড়ে বৃষ্টি হলে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মাথায় আসে ভাজাপোড়া বা এরকম কিছু খাওয়ার কথা। যদিও ভাজাপোড়া খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তবু এক দুদিন তো ব্যতিক্রম হতেই পারে! পিঠা, পাকোড়া বা জিলাপির মতো মুখরোচক কিছু বানিয়ে ফেললে বৃষ্টির দিনে খারাপ লাগবে না।
বৃষ্টিমুখর বিকেলে তেল দিয়ে মুড়ি মাখানোর সঙ্গে আর কিছুর তুলনা চলে না। তার সঙ্গে পেঁয়াজ, মরিচ, ধনিয়া পাতা, টমেটো হলে তো জমে ক্ষীর! বাদাম ও চানাচুর থাকলে সৃষ্টি হতে পারে অনন্য এক স্বাদের।
আর যারা ‘চাখোর’ প্রজাতির, যাদের চা না হলে চলেই না; তাদের জন্য মুখরোচক এ খাবারের সঙ্গে এক কাপ আদা চা বৃষ্টির সন্ধ্যায় হতে পারে অমৃত সমান। এক কাপ কফিও করে তুলতে পারে বৃষ্টির বিকেলটাকে আরও উপভোগ্য।
শিল্পের দুনিয়া
আকাশ থেকে মুষলধারে কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলে মন ক্যামন ক্যামন হয় অনেকের। তখন আপনার বিকেল বা সন্ধ্যেটা হতে পারে শৈল্পিক বিমূর্ততায়। আপনি আশ্রয় নিতে পারেন সিনেমা, গান কিংবা বইয়ের কাছে। এসময় শিল্পই হতে পারে আপনার যথার্থ সঙ্গী।
বৃষ্টির সন্ধ্যায় গানপ্রেমীরা যেন হয়ে ওঠেন তুমুল প্রেমিক। কেউ খুঁজে নেন রবীন্দ্র সংগীত। আবার কেউ শোনেন ধ্রুপদী। কেউবা আবার শুধুই ইন্সট্রুমেন্টাল। বৃষ্টির ছন্দের সঙ্গে পছন্দের গানের মূর্ছনা একাকার হয়ে অন্যরকম এক আবেশ তৈরি করে।
মেঘের শিশু যখন ধরাধামে নামে, ঘরে বসে তখন একাকিত্ব বোধ করেন অনেকেই। তাদের জন্য ভালো একটি বই হতে পারে মোক্ষম সঙ্গী। এক কাপ গরম চা অথবা কফি নিয়ে বই হাতে বসে পড়ুন। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ আর প্রিয় বইয়ের সংলাপ আরও মধুর করে তুলতে পারে আপনার সন্ধ্যা।
অনেক সিনেমাপ্রেমী যেন অপেক্ষাতেই থাকেন বৃষ্টির জন্য। এমন বিকেল বা সন্ধ্যায় প্রিয় জনরার কোনো সিনেমা উপভোগের চেয়ে আর কিছুর তুলনা চলে না। দেখতে পারেন সিনেমা অথবা পছন্দের কোনো সিরিজ। রোম্যান্টিক অথবা কমেডি সিনেমা হলেই ভালো, মন ফুরফুরে থাকবে। আবার কেউ কেউ শুধু বৃষ্টির রাতেই হরর সিনেমা দেখেন।
বৃষ্টির আবহ রোম্যান্টিক বা উদাস করে তোলে মানুষকে। বৃষ্টির রাতে কবিতা লিখতে ইচ্ছে হয়। বলাই বাহুল্য, ঝুম বৃষ্টিতে কষ্টকর হয়ে ওঠে শ্রমজীবী মানুষের দিন। তবু যারা বৃষ্টিতে ঘরে আটকে থাকে, তারা পায় একে অপরের আরও কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ। যদি অভিমানের বরফ জমে, বৃষ্টির রাত সেই বরফ গলিয়ে দেয়ার মোক্ষম মুহূর্ত। বৃষ্টিকে তাই বিরক্তির কারণ না বানিয়ে উপভোগ করুন।
/এএম
Leave a reply