নুরুজ্জামান খান:
জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলতে নামার সৌভাগ্য সবার হয় না। যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান তারা ভাগ্যবান বটেই। তবে অনেকেই জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও নিজেকে প্রমাণ করার আগেই ঝরে যান। তাদের খোঁজই বা রাখে কয়জন। আবার অনেকেই নিজেকে বিশ্বসেরাদের কাতারে তুলে ধরেন। নিজ নিজ প্রতিভা ও পারফরম্যান্সে মাতিয়ে রাখেন ফুটবলপ্রেমীদের।
যাদের প্রস্থান ব্যথিত করে ভক্তদের। শূন্যতা তৈরি করে দলে। তেমনি অনেক রথিমহারথি ফুটবল জগৎকে দুহাত ধরে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। চলতি বছর জাতীয় দলকে গুডাবাই বলেছেন এমন কিছু তারকাকে নিয়েই আলোচনা করা যাক।
আনহেল ডি মারিয়া:
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন ডি মারিয়া। তাকে ম্যান ইন ফাইনাল নামেও ডাকেন ভ্ক্তরা। আর্জেন্টিনা গত তিন বছরে চারটি শিরোপা জিতেছে। তার সব কয়টিতেই খেলেছেন এই নাম্বার ইলেভেন। তার একমাত্র গোলেই ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আলবেসেলেস্তেরা। এর মাধ্যমে ২৮ বছরের শিরোপা খরাও ঘোচায় আর্জেন্টিনা। পরের বছর ফিনালিসিমায়ও গোল করেন এই উইঙ্গার। আর্জেন্টিনা ৩৬ বছরের আরাধ্য বিশ্বকাপ জেতে ২০২২ সালে ফ্রান্সকে হারিয়ে। সেই ম্যাচেও গোল করেছিলেন ডি মারিয়া। সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন। তবে বেনফিকার হয়ে ক্লাব ক্যারিয়ার চালিয়ে যাবেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫ বার মাঠে নেমেছেন আনহেল ডি মারিয়া। গোল করেছেন ৩১টি। আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে ১১ ম্যাচে ৫ গোল ও অলিম্পিক দলের হয়ে ৬ ম্যাচে দুইটি গোল করেছেন এই তারকা।
লুইস সুয়ারেজ:
আন্তর্জাতিক ফুটবলকে অবসর জানিয়েছেন উরুগুয়ের তারকা লুইস সুয়ারেজও। বার্সেলোনার সাবেক তারকা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। তিনি উরুগুয়ে জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সুয়ারেজের গোল ৬৯টি। ম্যাচ খেলেছেন ১৪৩টি। এছাড়া উরুগুয়ের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলে ৫টি গোল করেছেন।
টনি ক্রুস:
বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার বলা হয় জার্মানির টনি ক্রুসকে। গত ইউরোর পর সব ধরনের ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই মিডফিল্ডার। জার্মানির জার্সিতে ১১৪ ম্যাচ খেলা ক্রুস গোল করেছেন ১৭টি। জার্মানির হয়ে বয়সভিত্তিক দলে ২৩টি গোল রয়েছে এই তারকার। রিয়ালের হয়ে ৪৬৫ ম্যাচ খেলা ক্রুস ২৮টি গোলের পাশাপাশি ৯৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা ২০৫ ম্যাচে তার গোল সংখ্যা ২৪টি। সহায়তা ৪৯ গোলে। লেভারকুসেনের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ১০ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট রয়েছে ক্রুসের।
গুন্ডোগান:
বর্তমান ফুটবলবিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার জার্মানির গুন্ডোগান। গত ১৯ আগস্ট তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। এই জার্মান মিডফিল্ডার জাতীয় দলের জার্সিতে ৮২ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১৯টি।
ম্যানুয়েল নয়্যার:
জার্মান গোলপোস্টের দেয়ালখ্যাত ম্যানুয়েল নয়্যারও জাতীয় দলকে গুডবাই জানিয়ে দিয়েছেন। এতে থামলো তার ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক অধ্যায়। গোলপোস্টের নিচে থেকেও বিশ্বসেরা হওয়া যায় সেটি বোধহয় নয়্যার খুব ভালোভাবেই সবাইকে বোঝাতে পেরেছিলেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০২০ দশকের সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী নয়্যার গোলকিপার হিসেবে বিশ্বকাপ ও ইউরোতে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার।
থমাস মুলার:
এবছর যেন অবসরের ঢেউ লেগেছিল জার্মান দলে। সেই ঢেউয়ে দেশের জার্সিকে বিদায় জানিয়েছেন জার্মানির স্ট্রাইকার থমাস মুলার। ইউরো থেকে বিদায়ের পর তার দেয়া বক্তব্যে ছিল অবসরের সুর। সেই সুরই পরে সত্যি করে জার্মানি দলকে বিদায় জানালেন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। জাতীয় দলের জার্সিতে ১৩১ ম্যাচ খেলা মুলারের নামের পাশে রয়েছে ৪৫টি গোল।
অলিভিয়ের জিরুদ:
ফ্রান্সের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুদ। জাতীয় দলের হয়ে ৫৭ গোল করেছেন এই তারকা। কাতার বিশ্বকাপে ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। গত জুলাইয়ে ইউরো টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল থেকে হেরে বিদায় নেয় ফ্রান্স। এরপর নিজেও ফ্রান্স ফুটবলকে বিদায় জানান লস অ্যাঞ্জেলসে সদ্য যোগ দেয়া এই তারকা।
শাকিরি:
জুলাইয়ে শেষ হওয়া ইউরোর পর দেশের জার্সি তুলে রেখেছেন সুইজারল্যান্ডের জেরদান শাকিরি। এতে ১২৫ ম্যাচেই থামে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। জাতীয় দলের জার্সিতে এই তারকার গোল রয়েছে ৩২টি। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে রয়েছে আরও চার গোল।
সুনীল ছেত্রী:
ভারতীয় ফুটবলের পোস্টারবয় সুনীল ছেত্রী। তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার ওপরে রয়েছেন ১৩২ গোল করা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ১০৯ গোল করা লিওনেল মেসি ও ইরানের আলী দাই। সুনীল ছেত্রী ভারতের জার্সিতে ১৫১ ম্যাচে গোল করেছেন ৯৪টি। গত জুনে তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেছেন।
এডিনসন কাভানি:
উরুগুয়ে ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা এডিনসন কাভানিও জাতীয় দলকে গুডবাই বলে দিয়েছেন। ক্ষিপ্র গতির এই স্ট্রাইকার যেকোনো দলের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার জন্য যতেষ্ট ছিলেন। তবে ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই জাতীয় দলে উপেক্ষিত ছিলেন এই তারকা। সবশেষ কোপা আমেরিকাতেও জায়গা হয়নি উরুগুয়ে দলে। কে জানে হয়তো বুঝে গিয়েছেন জাতীয় দলে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। তাইতো তিনিও বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন উরুগুয়ে দলকে। জাতীয় দলের জার্সিতে কাভানির গোলের সংখ্যা ৫৮টি।
এছাড়া চলতি বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন স্পেনের ফুটবলার জেসুস নাভাস, পর্তুগালের সেন্টারব্যাক ডিফেন্ডার পেপে, ইংলিশ ডিফেন্ডার কিরান ট্রিপিয়ার, একই দলের ডিফেন্ডার হ্যারি মাগুইরে, বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার জন ভার্টোনহেন, সুইস গোলকিপার ইয়ন সমার, সার্বিয়ার অধিনায়ক দুসান তাদিচ, নেদারল্যান্ডসের দালেই ব্লিইন্ড এবং ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রোজোভিচ। তাই ২০২৪-কে আন্তর্জাতিক ফুটবলের অবসরের বছর বলাই যায়।
Leave a reply