প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ: আওয়ামী লীগের বিবৃতি

বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের পতাকা উড়তে দেয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, প্রয়োজনে এজন্য আরেকটি যুদ্ধ হবে, যা কি না স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। কেউ যদি মনে করেন অত্যাচার, নির্যাতন করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়া যাবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল, ফিরে আসবে স্বমহিমায়।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া বিবৃতিতে এমন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। তাতে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে এমন বিবৃতি দিতে দেখা গেলো এই প্রথম।

বিবৃতিতে বলা হয়, জানি আপনারা ভালো নেই। দেশের সার্বিক অবস্থা চারদিকে সবার মাঝে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবে । আপনারা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দেশ ও দেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, আপনারা সবই জানেন, সবই দেখেছেন। এখন হয়তো সবকিছু অনুধাবন করতে পারছেন, কী পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরও লাশ চেয়েছিল। তিনি চাননি আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি হোক। তাই সময়ের প্রয়োজনে এই সাময়িক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের সব দাবির পক্ষেই গিয়েছে। শেখ হাসিনা ও আমাদের সরকার তাদের সকল দাবি মেনে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। নিহত সকল পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। তারপরও কেন এই অরাজকতা, এত হত্যা, এত ধ্বংসযজ্ঞ করা হলো? কারণ, এর পিছনে ছিল ক্ষমতা দখলের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক ষড়যন্ত্র। আপনারা দেখেছেন ১৬ জুলাই থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে কীভাবে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তি ও বিদেশি এজেন্টরা হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এমনকি ছাত্রদের ওপর ৭.৬২ রাইফেল ব্যবহার করে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলা হয়। কীভাবে ঢাকা শহরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কীভাবে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, বৌদ্ধ মঠে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কত নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ ও সাংবাদিক হত্যা এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। পাঁচই আগষ্ট কীভাবে বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ ভবন ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান বিচারপতির বাসভবন, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ব্যাক্তির সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালত বাসভবন পোড়ানো ও লুটপাট করা হয়েছে। আপনারাই ভেবে দেখুন, এসব সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাথে কোটা আন্দোলনের কী সম্পর্ক ছিল। যে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে, পরিকল্পিতভাবে কীভাবে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এবং ৪৫০টি থানা ও অস্ত্রাগার লুট করা হয়েছে। নিষ্ঠুরভাবে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পুলিশ অফিসারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কতজন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে এই সংখ্যাও জাতির সামনে এখনও সরকার প্রকাশ করছে না। এর সবই ছিল ক্ষমতা দখলের একটি ষড়যন্ত্র। তখন সরকার আরও কঠোর হলে হয়তো আরও লাশ পরতো, আরও অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি হতো। তাই মানুষের জানমাল রক্ষায় শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে ‘অবৈধ’ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, এই আন্দোলন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এর পেছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল এবং এর মাষ্টারমাইন্ড হিসাবেও একজনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনেকদিনের পরিকল্পনার ফসল নাকি তার এই সরকার। এ থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে এটা ছাত্রদের কোটার আন্দোলন ছিল না। তাই সকল দাবি মেনে নেয়ার পরও তারা পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে অরাজকতা চালিয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখে আপনারাও নিশ্চয় এখন অনুধাবন করতে পারছেন। আপনারা বুঝতে পারছেন, কেন সেন্টমার্টিন দ্বীপকে সংরক্ষিত করে কার্যত জনগণের যাতায়াতের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক সহিংসতা তৈরি করা হচ্ছে! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আপনাদের আশ্বস্ত করছে, আমাদের বুকে এক বিন্দু রক্ত থাকতে বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের ঘাঁটি হবে না। এই দেশ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কেনা। এই দেশ বাঙালির ২৪ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। অন্য কোনো দেশের পতাকা এই মাটিতে উড়তে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে আরেকটি যুদ্ধ হবে, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ।

এতে আরও বলা হয়, পাঁচই আগস্টের পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যেভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ড, অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়েছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। নির্বিচারে তাদের উপাসনালয়, ঘর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে ধন্যবাদ জানাই, তারা প্রতিবাদ করেছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আপনারা দেখেছেন, শান্তির ধর্ম ইসলাম; যারা এই দেশে প্রচার ও প্রসার করেছেন, সেই পীর-আউলিয়াদের মাজার কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। এইসব কিসের লক্ষণ? এই সবকিছুর সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের বিচার অবশ্যই করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নতুবা উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় এই ‘অবৈধ’ সরকারকেই বহন করতে হবে। আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারীকে বলবো, দেশে এ পর্যন্ত সংঘঠিত সকল হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ, ভাঙচুর, আগুন সন্ত্রাস, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলের সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করুন। নতুবা আপনারাও এর দায় থেকে মুক্তি পাবেন না।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্প্রতি ড. ইউনূস বাংলাদেশের ইতিহাসে রিসেট বাটন দিয়ে দেশের ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলছেন। যা খুবই আপত্তিজনক ও নিন্দনীয়। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য যতই রিসেট দেন না কেন, দেশের মৌলিক ও অস্তিত্বের ইতিহাসগুলো মুছার ক্ষমতা উনার নাই। মুছতে পারলে তো বাংলাদেশই থাকবে না। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, ত্রিশ লাখ শহীদ, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, জাতির পিতা হচ্ছে বাংলাদেশের মৌলিক ভিত্তি, আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের জায়গা। দেশকে তিনি শাসন-শোষণ যাই করুক, এসব গৌরবময় অধ্যায় মেনে নিয়েই করতে হবে।

/এটিএম/এমএন