স্টাফ করেসপনডেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামী রোমান মিয়াকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সেনাবাহিনী সদস্যরা গত বুধবার রাতে আটক করে আশুগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন, এসআই দীপক কুমার ও প্রদ্যুত ঘোষ চৌধুরীকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাতে আশুগঞ্জ বাজারের ভাড়া বাসা থেকে রোমান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রোমান মিয়া গত ২০ আগস্ট আশুগঞ্জ থানায় হওয়া একটি মামলার ৬ নম্বর আসামী। রাত থেকেই তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য উপজেলা বিএনপিসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মী ও উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের লোকজন থানায় চাপ দিতে থাকেন। তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে থানার সামনে অনেকেই অবস্থান নেন। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পরে থানার বাইরে থাকা লোকজন তাকে ফুলের মালা পরিয়ে নিয়ে যান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে আশুগঞ্জ গোল চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। সে সময় রোমান মিয়াসহ আরও অনেকেই তাদের হাতে থাকা ককটেল বিস্ফোরণ করে এলাকায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতি করে। একপর্যায়ে রোমান মিয়াসহ আরও অনেকেই তাদের কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে ছাত্রদের ওপর গুলি ছোঁড়েন। এ সময় একজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আসামীরা পেট্রোল দিয়ে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ২০ আগস্ট মো. রমজান মিয়া নামে একজন বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সাবেক সাংসদ মঈন উদ্দিনসহ ৪৮ জনকে আসামী করে আশুগঞ্জ থানায় একটি বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় রোমান মিয়া ৬ নম্বর আসামী। মামলায় রোমানের আপন ছোট ভাই দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেদ মিয়া ৫নম্বর আসামী।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার একটি স্বার্থান্বেষী মহল, যারা জীবনে কোনো দিন বিএনপি করেনি, তারা এখন নিজেদের বিএনপির নেতা-কর্মী দাবি করে ওই আসামীকে ছাড়িয়ে নেয়। এর সঙ্গে উপজেলা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মামলার বাদী রমজান মিয়া জানান, ভুল করে রোমান মিয়াকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। রোমানের বিষয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, আদালতে একটি এফিডেভিট (হলফনামা) দিয়েছি। তবে আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, এমন প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান বলেন, গত বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে আশুগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। পরে মামলার বাদী থানায় পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে ভুলক্রমে মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে পুলিশকে জানান। এ বিষয়ে তিনি আদালতে একটি এফিডেভিট (হলফনামা) দিয়েছেন এবং পুলিশকে তার কপি দিয়েছেন। বাদীর কোনো অভিযোগ না থাকায় ওই ব্যক্তির বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রশাসনিক কারণে পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
/এনকে
Leave a reply