আবারও পেছালো গাইবান্ধায় পুলিশ হেফাজতে নিহত সাজিদ হত্যা মামলার রায়

|

গাইবান্ধা করেসপনডেন্ট :

দ্বিতীয়বারের মতো পেছালো ১৮ বছর আগে গাইবান্ধা সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে নিহত সাজিদুর রহমান সাজিদ (২৬) হত্যা মামলার রায় ঘোষণা। রোববার (৬ অক্টোবর) গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ মো. ফিরোজ কবীরের আদালতে এ রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য ছিল।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিচারক রায় ঘোষণা না করে মামলার নথিতে আলামত সংগ্রহের আদেশ দেন। এ সময় আদালতে অভিযুক্ত ছয় আসামির মধ্যে তৎকালীন ওসি নুর আলমসহ চারজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, একই আদালতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে বিচারক না থাকায় সেদিন রায় ঘোষণা হয়নি। পরে আদালত নতুন করে আজ ৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেছিলেন।

এই মামলার অভিযুক্ত ছয় আসামি হলেন, সদর থানার তৎকালীন ওসি নুর আলম, উপপরিদর্শক (এসআই) আবু ইউসুফ, ফাহিমা হায়দার, কনস্টেবল দুলাল চন্দ্র সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও জেলা শহরের মুন্সিপাড়ার জনৈক দেলোয়ার হোসেন দেলু। তাদের মধ্যে কনস্টেবল দুলাল চন্দ্র সরকারের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জামিনে পলাতক রয়েছে এসআই আবু ইউসুফ। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত ওসি নুর আলমসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, সাজিদ হত্যা মামলায় আদালতে দীর্ঘ শুনানী ও একাধিক স্বাক্ষগ্রহণ শেষ হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। সেদিন বিচারক না থাকায় রায় ঘোষণার জন্য ৬ অক্টোবর নতুন দিন ধার্য করেন আদালত। তবে শেষপর্যন্ত রায় না হওয়ায় অপেক্ষা আরও বাড়ল।

এদিকে, দীর্ঘ প্রত্যাশিত মামলার রায় দ্বিতীয়বারের মতো পেছানোয় হতাশ ও শঙ্কিত সাজিদের বড় ভাই মামলার বাদি আব্দুল মাজেদ ও বাবা আব্দুর রউফ সরকারসহ তার স্বজনরা। সাজিদের বাবা আব্দুর রউফ সরকার জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ছেলে হত্যা মামলার রায়ের আশায় আদালতে ঘুরছেন তিনি। দুই দফায় দিন ধার্য থাকলেও রায় ঘোষণা করেনি আদালত। এরপর আর যেন রায়ের তারিখ পেছানো না হয়।

উল্লেখ্য, ১৮ বছর আগে ২০০৬ সালের ২১ মে সদর থানা হাজতে নির্যাতনের পর সাজিদকে (২৬) শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠে। সাজিদ জেলা শহরের মুন্সিপাড়ার কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ সরকারের ছেলে। ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে প্রথম বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করে সাজিদ একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতেন।

মামলার নথি এবং সাজিদের স্বজনরা জানায়, ২০০৬ সালের ১৮ মে শহরের কাঠপট্টি থেকে সাজিদকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি অস্ত্র আইনে মামলা দেয় পুলিশ। পরে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় এবং রিমান্ডের তৃতীয় দিনে ২১ মে থানা হাজতের ভেতরে সাজিদের মৃত্যু হয়। পরে তৎকালীন ওসি নুর আলম ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানো হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিবারের মামলা না নিয়ে ওসি নুর আলম নিজেই বাদী হযে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে, গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। এই রিপোর্টে সাজিদকে যে হত্যা করা হয়েছে তার সত্যতা বেরিয়ে আসে। পরে সাজিদের ভাই আব্দুল মাজেদ ও গাইবান্ধা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম গোলাপ বাদী হয়ে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলায় তৎকালীন ওসি নুর আলম, উপপরিদর্শক আবু ইউসুফ, ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক ফাহিমা হায়দার, উপপরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন, উপপরিদর্শক মাসুদ রানা, উপপরিদর্শক ফরহাদ হোসেনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে আবারও ওসি নুর আলম এসআই আবু ইউসুফকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

২০১০ সালের ৩ মে আদালত মামলা দুটি আমলে নিয়ে সম্বনয় করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আজিজুর রহমানকে। পরে তদন্ত শেষে তৎকালিন ওসি নুর আলম, উপপরিদর্শক আবু ইউসুফ, উপপরিদর্শক ফাহিমা হায়দার, কনস্টেবল দুলাল চন্দ্র সরকার, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও শহরের জনৈক দেলোয়ার হোসেনসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি রিপোর্ট দেন আজিজুর রহমান। পরে ২০১৫ সালের ২২ জুন আদালত অভিযুক্ত ওসি নুর আলমসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠনের আদেশ দেন। 

এর আগে, ২০১০ সালের ২০ মে অভিযুক্তদের আসামিদের গ্রেফতারে নির্দেশ দেয় আদালত। নির্দেশের পর গত ১ জুন আসামি নুর আলম, ফাহিমা হায়দার, দুলাল চন্দ্র ও মিজানুর রহমান হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট জামিন না দিয়ে তাদেরকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। পরে গত ৫ জুলাই ৪ আসামি হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৩ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে অপর আসামি তৎকালীন উপপরিদর্শক ফাহিমা হায়দারকে অন্তবর্তীকালিন জামিন দেন আদালত।

/এএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply