বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডব’। একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসংখ্য জয়ের স্বাক্ষী বাংলার ৫ ক্রিকেটার। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে ভক্তরা ভালোবেসে ডাকতেন পঞ্চপাণ্ডব। টি-টোয়েন্টিতে আজ শেষ হচ্ছে পাণ্ডব যুগ। কেননা, আগেই মুশফিক, তামিম এবং মাশরাফি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়েছেন। সাকিব আল হাসানও জুনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেই শেষ ম্যাচ খেলেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
বাকি ছিল কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারও বিদায়লগ্ন এসে গেছে। আজই ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে দেশের জার্সিতে শেষবার ২০ ওভারের ম্যাচ খেলতে নামবেন। এর মধ্যদিয়েই টি-টোয়েন্টিতে শেষ হচ্ছে পাণ্ডব অধ্যায়।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির মহাকাব্যে আজ রিয়াদ লিখবেন শেষের কবিতা। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ একটি উপন্যাস হলেও ক্রিকেট সাহিত্যে মাহমুদউল্লাহ এমন একটা কব্তিা লিখতেই পারেন। ২২ গজে ব্যাট হাতে অনেক কিছুই তো লিখেছেন রিয়াদ। শুধু এটাই হয়তো বাকি।
লাল-সবুজের জার্সিতে শেষবার মাঠে নামছেন রিয়াদ, তাইতো, টাইগার ভক্তরাও এমন একটি কাব্য পড়তে চান বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সেই কাব্যের সাক্ষী হতে চান। প্রশ্ন হলো, রিয়াদ কি সেটি করতে পারবেন? প্রশ্ন উঠেছে- দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেশের ক্রিকেটের মিডলঅর্ডারের গল্পগুলো যেভাবে লিখেছেন, শেষ অধ্যায়ে এসেও সেভাবে লিখতে পারবেন গল্প?
নামটা যেহেতু সাইলেন্ট কিলারের তাই তাকে নিয়ে সেই প্রত্যাশা করতেই পারেন ভক্ত-সমর্থকরা। কেননা, বড় বড় ছক্কায় গ্যালারিতে বল আচরে ফেলার অসংখ্য ইতিহাস রয়েছে তার। রিয়াদের এই ম্যাচে অনুপ্রেরণা হতে পারে ২০২১ সালে হারারে টেস্টে তার বিদায়ী ১৫০ রানের ইনিংসটি। যদিও সেবার ম্যাচ চলাকালীন অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। আজও নাহয় আরেকটি স্মরণীয় ইনিংস আসুক তার ব্যাট থেকে। শেষটা জয় আর রিয়াদের নায়কোচিত ইনিংসেই শেষ হোক এই ক্রিকেটারের বিদায়।
৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ১৪০ টি-টোয়েন্টি। অর্থাৎ ১৪১-এ থামবে তার ক্যারিয়ার। তিনিই দেশের জার্সিতে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ খেলেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাকিব মাঠে নেমেছেন ১২৯ ম্যাচে।
১২৯ ইনিংসে ব্যাট করা রিয়াদের রান ২ হাজার ৪৩৬। ব্যাটিং গড় ২৩ দশমিক ৬৫। স্ট্রাইক রেট ১১৭ দশমিক ৫১। আটটি অর্ধশতক থাকা রিয়াদের ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসটি এসেছিল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। এই ফরম্যাটে বল হাতে ৪০টি উইকেটও রয়েছে তার ঝুলিতে।
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ টি-টোয়েন্টিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেখানে ১৬ জয়ের বিপরীতে হার ২৬টি। একটিতে ফল আসেনি। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রিয়াদ। তবে সেবার ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের দেয়া ১৪১ রানের লক্ষ্যের ম্যাচও হারে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর ব্যর্থ রিয়াদকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে ছেঁটে ফেলাও হয়।
তবে হাল না ছাড়া রিয়াদ ফিটনেস ধরে রেখে মাঠে ফেরার লড়াই চালিয়ে গেছেন। তার লড়াই ও বিকল্পের অভাবে আবারও দলে জায়গা পান। সবশেষ আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেও খেলেছেন এই তারকা। যদিও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ভারত সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ব্যর্থ হন মাহমুদউল্লাহ। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন অবসরের।
অবসর ঘোষণার সময় মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, তার কোনও দুঃখ নেই। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে একটি বিশাল বিষয়। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। তিনি বলেন, আমি যতগুলো টি-টোয়েন্টি খেলেছি, জানি না ভালো খেলেছি কি না। তবে আমি আমার সবটুকু দিয়েছি।
ভক্ত সমর্থকের চাওয়া শেষটাও রঙিন হোক রিয়াদের। আর লাল সবুজের জার্সিতে দীর্ঘ সার্ভিসের জন্য ধন্যবাদ মিস্টার সাইলেন্ট কিলার।
/এনকে
Leave a reply