তানভীর বারী হামিম ⚫
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসগুলোতে তাদের নির্যাতনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জমা হয়েছিল দীর্ঘ ক্ষোভ। জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হতে থাকলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠে। তাতে সারাদেশে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগ তাদের অত্যাচার-নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ডকে ছাত্ররাজনীতির নামান্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। সংগঠনটি অনেকক্ষেত্রে তা না বুঝে তাদের ক্ষমতার জানান দিলেও বিষয়টি ভালোমতোই বুঝতেন শেখ হাসিনা। আর তিনিই কখনও সরাসরি মদদ দিতেন, আবার কখনও নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ছক কষে এমন কাজ অব্যাহত রাখতে বলতেন। মূলত, ক্ষমতাচ্যূত শেখ হাসিনা তিনটি বিষয় ধারণ করতেন।
প্রথমত, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিষ্পেষণের মাধ্যমে জিম্মি করে ছাত্রলীগের পথে হাঁটানো এবং পক্ষে রাখার কৌশল।
দ্বিতীয়ত, ছাত্রলীগের অপরাজনীতিকে ছাত্ররাজনীতির নামে বপন করে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিবিমুখ করা। যেন রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করে দেশের স্বার্থকে বিকিয়ে দিলেও শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে, সে পরিস্থিতি তৈরি করা।
তৃতীয়ত, কখনও এখনকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে অর্থাৎ ছাত্রলীগ তাদের অপরাজনীতি চর্চা না করতে পারলে ছাত্ররাজনীতি যেন যথার্থতা হারায়।
শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে যে বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে, তাতে সারাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক রয়েছে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে। প্রবাদ আছে— ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। ছাত্রসংগঠনের নামে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর যে অন্যায়-অনিয়ম-দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছিল, তাতে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা এখনও ট্রমাটাইজড। আর ট্রমাটাইজড করে রেখে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে সঙ্কট জিইয়ে রাখা শেখ হাসিনারই কূটকৌশল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি যেখানে ষড়যন্ত্র করে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেখানে দেশরক্ষার কবচ নিয়ে হাজির হন। সারাদেশে তারেক রহমানের নির্দেশনায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের দিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। যারা প্রতিটা স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেমের বার্তা
নিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক সচেতনতা, ছাত্ররাজনীতি এবং ছাত্রলীগের অপরাজনীতি যে এক নয়, সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা তাতে বিস্মিত হচ্ছেন। তারা দেখছেন, ছাত্রদলের নেতারা দেশ রক্ষার ইশতেহার নিয়ে হাজির হচ্ছেন তাদের কাছে। শিক্ষার্থীরা কেমন ক্যাম্পাস চায়, কেমন দেশ চায়— ছাত্রদল নেতারা এমন প্রশ্ন জানতে চাওয়ায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছেন তারা। তাদের মাঝে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
ফেসবুক লাইভে দেখলাম, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলামকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করছে— আপনারা তো অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু আপনারাও কি ছাত্রলীগের মতো দানব হয়ে উঠবেন? জবাবে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, নির্যাতিতরা কখনও নির্যাতন করে না।
ছাত্র সংগঠকদের নিয়ে এমন ভীতি কাটাতে কাজ করছে ছাত্রদল। তাই তো সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটছে ছাত্রদলের টিম, আর তাদেরকে বরণ করে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষের মধ্যে কথোপকথনে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে উচ্ছ্বসিত। এসব হচ্ছে তারেক রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। যার স্বপ্ন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তিনি কাজ করতে চান তারুণ্যের শক্তি নিয়ে। আর সে কারণেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে— ধন্যবাদ, তারেক রহমান।
লেখক: প্রচার সম্পাদক, কবি জসীমউদ্দীন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল
Leave a reply