শেষ ৪ বছরে দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ

|

দেশে সবশেষ ৪ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে এইডসে আক্রান্ত রোগী। চলতি বছর এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত রেকর্ড প্রায় দেড় হাজার। সংক্রমিতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ৪০৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এ বছর এইডসে প্রাণ গেছে ১৯৫ জনের।

রোগীর সাথে সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লেও উল্টো দিকে বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যাও। বিদেশফেরত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কড়াকড়ি না থাকায় আক্রান্তরা বহুগুণে আক্রান্ত করছে পরিবার ও প্রিয়জনদের। সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে নতুন করে রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছে ১ হাজার ৪৩৮ জন। তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সমকামী, ২৪ শতাংশ সাধারণ মানুষ ও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিক, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদের ৮০ শতাংশই বিদেশফেরত কর্মী। তাই বিদেশফেরত প্রত্যেক কর্মীর এইচআইভি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আক্রান্তদের ৬৩ শতাংশই ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধমে দেশের সমকামী ব্যক্তিরা একজন অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পরে দেখা-সাক্ষাতের মাধ্যমে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। এদের এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দেশে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয় ১২ হাজার ৪২২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে দুই হাজার ২৮১ জন। ইউএনএইডসের অনুমিত হিসাবে দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজার। সংক্রমিত ব্যক্তির তুলনায় শনাক্তের হার ৮৮.৭২ শতাংশ।

সংক্রমিত সাত হাজার ৫০০ মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখনো প্রায় দুই হাজার সংক্রমিত ব্যক্তি চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে।

সংক্রমণের হার কম হলেও ঘনবসতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং অসচেতনতার কারণে এইচআইভির ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের ঝুঁকি রয়েছে।

ইতোমধ্যে সারা দেশের অনেকগুলো কেন্দ্রে সেবা দেয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার আশায় ঢাকাতেই ছুটে আসেন অধিকাংশরা। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট নন রোগীরা। এক রোগী বলেন, চোখের সামনে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা করা দরকার।

সরকারি তথ্য অনু্যায়ী, যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারীসহ লুকিয়ে থাকা আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

চিকিৎসকরা বলেন, এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। হাঁচি, কাশি বা থুুতুর মাধমে, একই পাত্রে খাবার বা পানি খেলে আক্রান্ত ঝুঁকি নেই। এমনকি একসঙ্গে ওঠাবসা, খেলাধুলা বা স্পর্শ করলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে রোগটি ছড়ায় না।

তবে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ-সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ব্যতীত যৌন মিলন করলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় অথবা বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তান আক্রান্ত হতে পারে।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply