ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চলতি বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর দুদিন পর অর্থাৎ ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর শতাধিক দিন পেরিয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রচার হয়েছে অন্তত ৮৯৬ ভুয়া খবর। সরকারের নামে সামাজিক মাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া সেসব ভুয়া খবর ও তথ্যের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে দেশীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সবথেকে বেশি ভুয়া খবর প্রচারিত হয়েছে সেপ্টেম্বরে, ২৭৬টি। সরকার পতনের মাস ও অক্টোবরে ছড়িয়েছে দুই শতাধিক অপতথ্য। নভেম্বরের প্রথম ১৫ দিনেও ভুয়া খবর ছড়িয়েছে দেড় শতাধিক।
এসব ভুল তথ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল রাজনীতি কেন্দ্রিক ঘটনার অপতথ্য। এর বাইরে আশঙ্কাজনকভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে জাতীয়, ধর্মীয় এবং পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক ইস্যুতে। আর্থিকসহ একাধিক প্রতারণায়ও ভুয়া তথ্যের ব্যবহার লক্ষণীয় ছিল এই ১০০ দিনে। এছাড়া এই সময়ে বর্তমান সরকারকে জড়িয়ে ৯৯টি গুজব প্রচার করা হয়েছে।
ব্যক্তি হিসেবে এই সময়ে অপতথ্যের সবচেয়ে বড় শিকার ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে জড়িয়ে ৯০টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ৭২টি গুজব প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে জড়িয়ে যথাক্রমে ২৪টি ও ১৮টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে জড়িয়ে সমানসংখ্যক ১৫টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
ভুল তথ্যের এই প্রবাহে জড়িয়েছে সরকারের আরেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নামও, তাকে জড়িয়ে ৮টি অপতথ্যের প্রচার করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও ১১ বার ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন।
রিউমর স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১০০ দিনের এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপতথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এই সময়ে একক বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪৭টি অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার, যা সব অপতথ্যের প্রায় ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পুলিশকে জড়িয়ে ভুল তথ্য প্রচারের সংখ্যা ১৬টি। এছাড়া বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে জড়িয়েও একই সময়ে একাধিক ভুয়া তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বাতাসে ঘুড়ে বেড়িয়েছে শতাধিক ইস্যু। প্রায় সকল ইস্যু নিয়েই অপতথ্য প্রচারের আধিক্য ছিলো। যারমধ্যে সবথেকে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে আগস্টে হয়ে যাওয়া বন্যা ইস্যুতে।
এছাড়াও পাহাড়ে সংকট ঘিরে ১৮টি, নভেম্বরে শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে ১৭টি, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া সংক্রান্ত ১৬টি, অক্টোবরের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ১৫টি, সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গের বন্যা ইস্যুতে ৭টি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ইস্যুতে ৭টি, নভেম্বরে ঢাকায় ইসলামী মহাসম্মেলন ঘিরে ৬টি এবং আগস্টে সচিবালয়ে আনসার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চারটি গুজবের তথ্য বের করেছে রিউমর স্ক্যানার।
এছাড়া, সাম্প্রদায়িক প্রোপাগাণ্ডা ইস্যুতে ৮৪টি এবং সেন্টমার্টিন ইস্যুতে সময়ে সময়ে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই ১০০ দিনে অপতথ্যের এমন প্রবাহকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করেছে রিউমর স্ক্যানার। তাদের পরিসংখ্যানে ফেসবুকের পাশাপাশি অপতথ্যের প্রবাহে বেশ আলোচনায় ছিল মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স (সাবেক টুইটার)।
/এমএইচ
Leave a reply