ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যশোরের ভিডিওটি ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’

|

যশোর করেসপনডেন্ট:

সুসজ্জিত মঞ্চের চিত্রনাট্যের দৃশ্যায়ন নয়, একেবারে যেন বাস্তব ঘটনার মতোই মনে হবে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের পোশাকসাদৃশ্য বস্ত্র দুজনের শরীরে। সেইসাথে হাতে রাইফেল নিয়ে স্লোগান। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি নিয়ে নেটিজেনরা সমালোচনা করছেন, প্রকাশ করেছেন নানা শঙ্কা।

‘ডা. ইলিশ নজরুল’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বুধবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। পোস্ট করা ওই ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘দেশে জঙ্গির অবাধে চাষবাস’। তবে ভিডিওটি অনুষ্ঠানের একটি অভিনয়ের অংশ হিসেবে দাবি করে প্রতিউত্তর দিয়েছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি যশোর সদর উপজেলার রামনগর রাজারহাট এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর সেখানে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। অর্থাৎ, এটি স্ক্রিপ্টেড নাটকের একটি দৃশ্য, যা অনুষ্ঠানের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্বের একটি পারফরম্যান্স।

ভিডিওর সার্বিক অংশে দেখা যায়, একটি সুসজ্জিত মঞ্চে হাটু গেড়ে বসে আছে কয়েকজন মানুষ। সবার পরনে সাদা পায়জামা, মাথায় টুপি। মঞ্চটির একটি কোণে সুসজ্জিত ডায়েস। ডায়েসের দু’পাশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের পোশাকসাদৃশ্য পরিধান করে দুই ব্যক্তি অস্ত্রসাদৃশ্য বস্তু হাতে দাঁড়িয়ে। প্রায় একই ধরণের সাদা পোশাক পরহিত আরেকজন ডায়েসে দিচ্ছেন বক্তব্য। বক্তব্য মাঝে মাঝে ‘আল্লাহ আকবর’ উচ্ছ্বারণ করে স্লোগানও দিচ্ছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। আরবিতে দেয়া ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এমন একটি বক্তব্যের ভিডিওটিই রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকী বলেন, রামনগর এলাকাতে অনেক সুনামের সঙ্গে মাদরাসাটিতে পড়াশোনা হয়। মক্তব, হেফজ, কিতাব ও নাজিরা বিভাগসহ চারটি বিভাগের সাড়ে চারশ’ শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করে। প্রতি বছরে ন্যায় এবারেও চলতি মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে গজল, বাংলা, আরবি, হামদসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়। ঔই অনুষ্ঠানে ইসরাইয়েলি বাহিনী যেভাবে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের ওপর নির্যাতন করছে সেটা নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিতাব বিভাগের তিন শিক্ষার্থী নাটকটি মঞ্চায়ন করে। ওদের মধ্যে একজন ফিলিস্তিনি নেতা সেজে আরবিতে বক্তব্য দেয়। প্লাস্টিক দিয়ে অস্ত্র বানানো হয়। এটা শুধুমাত্র অভিনয়। এই ভিডিওটি অনেকেই ভিন্ন উদ্দেশ্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলেই তেমন কোনো বিষয় না।

তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানের এই পর্বে শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের লড়াই-সংগ্রামের বিষয়টি অভিনয় করে দেখিয়েছেন। তাদের মূল বার্তা ছিল, সেখানকার নিপীড়িত মানুষের অবস্থার জানান দেয়া। এর পাশাপাশি তাদের লড়াই চালিয়ে যাবার যে চেষ্টা তারই একটি দৃশ্যায়ন এটি। তবে এখানে আইএস’র আদলে সাজ কেন? এমন বিষয়ে জানা যায়, পোশাকটির বাহ্যিক অংশটা সেই সংগঠনটির সাথে মিলে গেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ, যার মূল কারণ পোশাকটির কালো রং। আসলে ফিলিস্তিনের খতিবরা এরকম কালো রংয়ের পোশাক পরেন। শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে সেই পোশাকের রেপ্লিকা পরিধানের সময় ফিলিস্তিনি খতিবদের পোশাকের আদল পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারেনি এবং বুঝতে পারেনি। একইসাথে হাতে বন্দুক থাকায় সার্বিক বিষয়টি একটি সংগঠনের সাজের সাথে অনিচ্ছাসত্ত্বে মিলে গেছে।

মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ও ভাইরাল হওয়া নাটকে অভিনয় করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রেস কনফারেন্স করেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, ভিডিওটি মাদরাসাটির বার্ষিক অনুষ্ঠানের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ পর্বের একটি অংশ। শিক্ষার্থীরা সেখানে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের লড়াই-সংগ্রামের বিষয়টি অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করে। ককশিট দিয়ে তারা নকল অস্ত্র বানিয়ে উপস্থাপন করেছে। ঘটনাটি ভাইরাল হবার পর পুলিশ রাতেই মাদরাসা পরিদর্শন ও ডামি অস্ত্রসহ অন্যান্য উপকরণ পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। ভিডিওটি নিয়ে বিভ্রান্ত না হবার পরামর্শ দেন তিনি।

/এমএইচআর 


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply