অবৈধভাবে আশিয়ান সিটির জমি দখল, প্রতারণা, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার বড়ুয়া দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা আনোয়ারা মায়া সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রির্পোর্টাস ইউনিটিতে হামলার শিকার হন। পরে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা রির্পোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ ঘটনা ঘটে।
এ হামলা উপেক্ষা করে আসিয়ান সিটির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আনোয়ারা মায়ার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা। তিনি তার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে আনোয়ারা মায়ার ওপর আশিয়ান সিটির লোকজন হামলা করেন। তার আগে ডিআরইউ চত্ত্বরে আশিয়ান সিটির লোকজন ভিড় জমায় এবং হট্টগোলের চেষ্টা করে। এ সময় তারা সংবাদ সম্মেলন না করতে হুমকি দেন। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের হস্তক্ষেপ এবং পুলিশের সহযোগিতায় আসিয়ান সিটির লোকজন চত্ত্বর ছেড়ে চলে যায়।
এরপর সেখানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা বলেন, আমরা অনেকটা মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা সবাই আশিয়ান সিটির প্রতারণার শিকার। আমাদের কারও কারও পৈত্রিক জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। কেউ কেউ প্লট কিনেও তা বুঝে পাচ্ছেন না। বরং প্লট বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। এ রকম শত শত মানুষের শতশত বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে আশিয়ান সিটি।
লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৯ সালে খিলক্ষেত থানার বড়ুয়া দক্ষিণ পাড়ায় আমার মা আনোয়ারা মায়ার এক বিঘা জমি দখল করে নিয়েছে আশিয়ান সিটি। এই জমির দলিল, নামজারি, খাজনাসহ সকল কাগজপত্র আমার নামে। এই জমি নিয়ে বিবাদের জেরে আমার মামাকে তারা হত্যা করেছে। আদালতে গিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে। আদালত ওই জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেছেন, কোনও পক্ষ কিছু করতে পারবে না। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেই জমি সন্ত্রাসীবাহিনী দিয়ে অস্ত্রের মুখে দখল করে নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে খিলক্ষেত থানায় গিয়ে কোনও লাভ হয়নি। আশিয়ানের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেয়নি।
জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা আরও বলেন, বিতর্কিত এই আশিয়ান সিটির মালিক ভূমিদস্যু নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া এতদিন আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে দখলবাজির মাধ্যমে জমির অবৈধ ব্যবসা করেছে। তখন জমি খেকো এই নজরুলের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ, পুলিশের বেনজীর, হারুন, মনির, আসাদুজ্জামান মিয়া, হাবিব, আওয়ামী লীগ নেতা মৃত সাহারা খাতুন, তোফাজ্জল চেয়্যারম্যান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মফিজ, নাঈমসহ আরও অনেকে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দাবি করেন, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণ খান, ও বড়ুড়া মৌজায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ভিটে মাটি ছাড়া করছে আসিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ। কেউ এর প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও তারা জমির মালিকদের নিরাপত্তায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে আশিয়ান সিটি পুলিশ, মাস্তান, ক্যাডার, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে প্রচুর টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। আর রাজউক তাদের অবৈধ কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ দিয়েই ক্ষান্ত।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ১ ডজনেরও বেশি ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হয়েও নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা বহাল তবিয়তে। বিপরীতে আন্দোলনের সমর্থক হয়েও পথে পথে ঘুরছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীর মেয়ে।
রিহ্যাব ফেয়ারে আশিয়ান সিটি অন্যের জায়গা বিক্রির যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা বন্ধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
/এমএন
Leave a reply