৯ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জন্মহার বেড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়

|

প্রায় ১ দশক পর জন্মহার বাড়লো দক্ষিণ কোরিয়ায়। মাত্রাতিরিক্ত বাড়িভাড়া, ঋণের বোঝা আর শিশু লালনপালনে অত্যধিক ব্যয়ের কারণে দেশটিতে ক্রমশ কমছিলো বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের হার। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ১.২৪ হার থেকে টানা আট বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার কমে যাওয়ার পর, ২০২৪ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রজনন হার প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রে ০.৭২ থেকে বেড়ে ০.৭৫ শিশু হয়েছে। পরিসংখ্যান কোরিয়া অনুসারে, প্রতি ১,০০০ জনে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৪.৭, যা ২০১৪ সাল থেকে ক্রমাগত নিম্নমুখী প্রবণতাকে পেছনে ফেলেছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো মা হওয়া হিউন জিন জানালেন, ৫ বছর আগে প্রথমবার মা হওয়ার চেয়ে অনেকটাই সহজ ছিল এবারের যাত্রা। অনেক বদল এসেছে কোরীয় আর্থসামাজিক ব্যবস্থায়।

গেলো কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিম্নমুখী ছিল জন্মহার। যা পুরো বিশ্বে র সর্বনিম্ন হারে পরিণত হয়। মাত্রাতিরিক্ত বাড়িভাড়া, ঋণের বোঝা, শিশু লালনপালনে অত্যধিক ব্যয়ের কারণে বিয়ে ও সন্তান জন্মদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল তরুণরা। ধীরেধীরে আসছে পরিবর্তন।

স্ট্যাটিস্টিকস কোরিয়া পরিচালক পার্ক হিউন জুং বলেছেন, ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মেছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩শ’ শিশু। গেলো বছরের তুলনায় ৮ হাজার ৩শ’ বেড়েছে। গেলো বছর মোট প্রজনন হার ছিল শূন্য দশমিক ৭৫; যা ২০২৩ এর চেয়ে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি।

এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ। সন্তান জন্মদানে কর্মীদের ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত বোনাস দিচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি ১ বছর থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে দেড় বছর। এর মধ্যে ছয় মাস স্ববেতন ছুটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আগে ছিলো তিন মাস।

তাছাড়া, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা আর প্রণোদোনা তো রয়েছেই। জনসংখ্যা সংকট কাটাতে গত বছর, একটি নতুন মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব দেন অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে শিশু যত্ন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ। মওকুফ করা হয়েছে কর, আবাসন খরচেও দেয়া হচ্ছে ছাড়।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং মোক বলেন, জন্মহার বাড়াতে নীতিমালার দুর্বলতা চিহ্নিত করে দ্রুত সংশোধনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সার মাতৃত্বকালীন সময়ে তারা কীভাবে আর্থিক অসচ্ছলতার কথা চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

চলতি বছর, এ খাতে ১৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে সরকার; যা ২০২৪ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।

তবে, বিশ্লষকরা বলছেন, শুধু বাজেট বরাদ্দ করলেই চলবে না। বাজেটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আরও কার্যকর নীতিমালা দরকার।

জরিপ বলছে, বর্তমানে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ দক্ষিণ কোরীয় বিয়ে নিয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply