আত্মসচেতন বহুমাত্রিক লেখক নেয়ামত ভূঁইয়া। একান্ত অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে তার লেখায়। তার সৃষ্টিকর্মে সব সময় বুদ্ধিবৃত্তিক ও যুক্তির ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়। এবারের একুশে বইমেলায় নেয়ামত ভুঁইয়ার মোট পাঁচটি বই প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং অপরটি বিদেশি গল্পের অনুবাদ ও লেখকের নিজের গল্প।
উৎস প্রকাশন এই বইগুলো প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে লেখকের মোট ১৮টি বই প্রকাশিত হলো।
কাব্যগ্রন্থ ‘এখানে সকাল হয় রাত পোহায় না’ -এই বইয়ের প্রতিটি কবিতা পাঠককে নিয়ে যাবে এক অন্যরকম জগতে। কখনো রোমান্সের কোমলতায়, কখনো ব্যথার গভীরে, কখনো জীবনদর্শনের নির্মল উপলব্ধিতে। সহজ-সরল ভাষার মোড়কে লুকিয়ে থাকা গভীর চিন্তার বিন্যাস, ছন্দের মৃদু স্পর্শ আর শব্দের জাদু মিলিয়ে হয়ে উঠেছে এক আবেগঘন কাব্যসফর।

কাব্যগ্রন্থ ‘ত্রিশূলের শামিয়ানা’ বিজ্ঞজনদের মতে ভালো কবিতা রচনার জন্য মানতে হয় কবিতার ব্যাকরণ সহ নানা অনুষঙ্গ। কিন্তু এসব পাশ কাটিয়ে কেবল আবেগ ও উচ্ছ্বাসের স্বতঃস্ফূর্ততায় যে কবিতা হয় এই কাব্যগ্রন্থে তা প্রমাণ করেছেন লেখক।
কাব্যগ্রন্থ ‘কিংশুকের দেশ হৃৎসুকের দেশ’ – এই বইটিতে স্থান পেয়েছে মোট ২০১টি কবিতা। অনেকটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় এই বইটি কবিতা প্রেমীদের মনে আনন্দের খোরাক জোগাবে।
গল্পগ্রন্থ ‘দেশ-বিদেশের গল্প’ -ভাষার অন্তরায় অন্তরের আগল। আর অনুবাদ কিছুটা হলেও সে আগল ভাঙতে পারে। ভাষার বাধা পেরোতে সাহায্য করতে পারে। সীমাবদ্ধতা জয় করার আকুতি চিরন্তন। ভাষার সীমাবদ্ধতা জয় করার মাধ্যমে মানুষ ভিন্ন সমাজ-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য-সাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারে।
প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রেম এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’ -চৌকস ও অভিনব উপস্থাপন রীতির কারণে নেয়ামত উল্লার প্রবন্ধসম্ভার সুখপাঠ্য। এই গ্রন্থস্থ প্রবন্ধগুলোর কয়েকটি নাতিদীর্ঘ হলেও দীর্ঘ ও অতিদীর্ঘ প্রবন্ধও রয়েছে একাধিক। আবার গদ্যের পাশাপাশি রয়েছে পদ্যাংশও। রয়েছে খানিকটা রম্যরসের সংশ্লেষ। গ্রন্থপাঠান্তে নানা স্বাদ ও রস আস্বাদনের সুযোগ পাবেন পাঠক।
নেয়ামত ভূইয়া একাধারে কবি, গল্পকার, প্রবন্ধকার ও অনুবাদক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যে অভিসন্দর্ভের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কুমিল্লার বরুড়া শহীদ স্মৃতি কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে। তিনি রাজউক-এর সচিব এবং মাগুরা ও মাদারীপুর জেলা প্রশাসকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া আম্মানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রথম সচিব ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং জেদ্দা কনস্যুলেট জেনারেল-এ হেড অব চ্যান্সারি ও ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ব ব্যাংক এর এ্যাডভাইজার হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। বিভিন্ন দৈনিকে তিনি নিয়মিত কবিতা, নিবন্ধ ও গল্প লেখেন। তিনি বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ লিমেরিক সোসাইটি, লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
Leave a reply