খোদার ঘরে তাওয়াফ এবং কিছু মুগ্ধতা

|

আরিফুর রহমান

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। ঠকঠক করে তিনি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করছেন। কিন্তু তিনি ঠকঠক করছেন কেন? সে বিষয়ে একটু পরে আসছি।

অনেকদিন ধরে খোদার ঘর দেখছি কিন্তু সেই অর্থে কিছু ভাবিনি। আজ ভাবছি। অনেক ভাবছি। মানুষ কাবার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করছে। কেন করছে? এই প্রদক্ষিণ চলবে কতদিন? কেয়ামত পর্যন্ত?

কাবাঘরের হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সৌভাগ্য হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাছাকাছি গিয়েছি, সুযোগ পাইনি। কঠিন ভিড় ঠেলে গিলাফ ধরেছি, রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করেছি, দরজার চৌকাঠ ধরেছি, ইব্রাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন ছুঁয়েছি। কিন্তু সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে পারিনি। আচ্ছা, দিনে পারিনি, রাতে চেষ্টা করি। তখন তো আরও বেশি মানুষ! মধ্যরাত, ভোররাত কিংবা অধিক তাপমাত্রায়? আল্লাহু আকবার! ন্যানো সেকেন্ডের জন্যও পবিত্র জায়গাটা খালি নেই। খালি হবে না।

এবার গিলাফের দিকে তাকালাম। ক্যালিগ্রাফি করা কোরআনের আয়াতটি দেখলাম। সূরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াত। ‘এবং স্মরণ করো, যখন আমি কাবাগৃহকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদস্থল করলাম এবং বললাম, মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো এবং ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে বলেছিলাম– আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখতে।’ এখানে আরও আয়াত রয়েছে, আমি শুধু এটা নিয়ে ভাবলাম। ভাবলাম আর স্রষ্টাকে দেখতে লাগলাম।

এমন মিলনকেন্দ্র, উপচে পড়া মানুষের ভিড় অথচ কোথাও লেখা নেই– ‘চোর হইতে সাবধান’, ‘মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন’ অথবা ‘হারিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’। প্রায় সবার হাতে দামি স্মার্টফোন, সাধারণ হাতব্যাগে সৌদি রিয়াল। বাংলাদেশি, মিশরী, পাকিস্তানি, কাশ্মিরীসহ বহু দেশের নারী। কেউ একা একা। কারো সঙ্গে স্বামী বা পুত্র। কোথাও লেখা নেই– ‘ইভটিজিং থেকে সাবধান’।

তাওয়াফকারীর অনেকেই জুতা ছাড়াই হাঁটছেন, সেজদায় পড়ছেন। বালু নেই, ময়লা নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে ইফতার করছেন। খেজুর, পানি, খুবুজ (রুটি) খাচ্ছেন। তবুও জায়গাটা আয়নার মতো পরিষ্কার। কী আজব কারবার! পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক কারও ধমক নেই। লাঠিপেটা তো দূরের কথা, হাতে বেতও নেই। কেউ ভুল করলে উল্টো সম্মানের সঙ্গে করণীয় বাতলে দিচ্ছেন। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছেন– ‘ইয়া হাজ্জি, ইয়া হাজ্জি।’

রয়েছে পাবলিক টয়লেট। ‘নাক চেপে ঢুকতে হবে’– এমন কিছুই মাথায় আসার কথা, তাই না? কিন্তু নাহ। এগুলো আমার বেডরুমের ওয়াশরুম থেকেও পরিষ্কার।

খোদার ঘরে ‘অন্ধ’ অতিথি

এসব ভাবছি আর মুগ্ধতায় নিমগ্ন হচ্ছি। সেই মগ্নতার মধ্যে শুনতে পেলাম ঠকঠক ঠকঠক আওয়াজ। দেখলাম, একজন দৃষ্টিহীন মানুষ ছড়ি হাতে কাবা প্রদক্ষিণ করছেন। তিনি হয়তো আল্লাহর ঘর দেখছেন না, কিন্তু আমার আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে দেখছেন।

মুমিনদের কাছে সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। এবং পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে– ‘তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট আছে বিশাল অনুগ্রহ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৭)

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply