সাইলেন্টলি গুডবাই ‘সাইলেন্ট কিলার’

|

মুরশিদুজ্জামান হিমু⚫

বিদায় বলাটা খুব কঠিন। ক্রিকেটারের জন্য বোধহয় সেটা আরও কঠিন। একটু বয়স হবার পর থেকেই যে ব্যাট-বল-প্যাড নিজের সঙ্গী করেছিলেন, তা তুলে রাখার সিদ্ধান্ত। খুব কঠিন, খুব। সেই কঠিন সিদ্ধান্তই নিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘সাইলেন্ট কিলার’ খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারও কি বিদায় বেলায় হৃদয় কাঁপলো? চোখ ছল ছল করলো? প্রিয়জনকে জাপটে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন? হয়ত হ্যাঁ, হয়ত না। সে প্রশ্নের উত্তর হয়ত কখনও রিয়াদই দেবেন।

প্রায় ১৮ বছরের ক্যারিয়ার। এরমধ্যে ছিল কতোই না উত্থান-পতন। বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যাক-টু ব্যাক সেঞ্চুরি, আবার দীর্ঘসময় রানখরা। কখনও দর্শকরা মাথায় তুলে নেচেছেন, আবার মাটিতে নামাতেও দ্বিধা করেননি। পারফর্মিং আর্ট বলে কথা। সেটা তো নিশ্চয়ই মাহমুদউল্লাহ নিজেও জানতেন। তাই বোধহয় সমালোচনা গায়ে মাখেননি। হয়তো মেখেছেনও, কে জানে?

একসময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছেন মাশরাফী, সাকিব, মুশফিক আর তামিমের সঙ্গে। মাশরাফী আর সাকিবের ভাগ্যবিধাতা হঠাৎ যেন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। বিদায় না বলেও দেশের ক্রিকেটে তারা আর নেই, এটা এখন মোটামুটি বাস্তব। সাকিবের ফেরার হয়ত সুযোগ কিছুটা হলেও রয়েছে, তবে বয়স আর আনুসাঙ্গিক জটিলতা মিলিয়ে মাশরাফী যে আর ফিরছেন না, এটা নিশ্চিত। তামিমও বিদায় বলেছেন ক্রিকেটকে। মুশফিক দুই ফরমেটকে গুডবাই বলে শুধু লাল বলের খেলা চালিয়ে যেতে চান আপাতত। একে একে যখন সব সহযোদ্ধা বিদায় বলেছেন, তখন নিঃসঙ্গ শেরপার মতো একা একা থেকে কী লাভ? শেষমেষ এটাই কি ভেবেছেন রিয়াদ?

ক্রিকেটারদের সাধারণত ইচ্ছা থাকে মাঠ থেকেই বিদায় নেয়ার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও তেমনই ইচ্ছা ছিল, বিভিন্ন মাধ্যমে নানা সময়ে জানা গেছে তেমনই। কিন্তু সেটা আর বাস্তবে হলো না। অন্যদের মতোই সে ইচ্ছেটা না পাওয়ার খাতার পৃষ্ঠাকেই ভারি করলো শুধু। সঙ্গে জমা করলো কিছু আক্ষেপ, কিছু না পাওয়ার বেদনা।

সঠিক সময়ে থামতে জানাটাও জরুরি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কি সঠিক সময়ে থামলেন? নাকি আরও আগে বিদায় বললে মাথায় মুকুট পড়ে বাড়ি ফিরতে পারতেন? এমন প্রশ্ন তোলাটাও বোধহয় অবান্তর নয়।

চল্লিশ ছুঁই ছুঁই যখন বয়স, তখন তো রেসটা আপাতত থামাতেই হয়। বাস্তবতা তো আর অগ্রাহ্য করার মতো না। রিয়াদ তা মেনেই হয়তো বিদায় বললেন। তবে, বাংলাদেশ ক্রিকেটটে তিনি যা দিয়েছেন, তা ইতিহাসে লেখা থাকবে যুগ যুগ ধরে। বহু বছর পরও নানা কারণে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন ‘সাইলেন্ট কিলার’।

/এমএমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply