#MeToo দু’টি শব্দে তীব্র প্রতিবাদ

|

ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ‘MeToo’ হ্যাশট্যাগটা ইতিমধ্যেই সবার নজরে পড়ে গেছে। মাত্র দু’টি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ ‘আমিও’। যদি কখনও ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা বা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন, আপনিও ছোট্ট করে এ কথাটি বলতে পারেন- ‘মি টু’ বা ‘আমিও’। অর্থাৎ, হ্যা, আমিও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। আর এটাই ঘটছে এখন ফেসবুক-টুইটারে।

মার্কিন অভিনেত্রী অ্যলিজা মিলানো গত রবিবার রাতে একটা টুইট করেন। যাতে লেখা- ‘যদি আপনি যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন, এই টুইটের রিপ্লাইয়ে ‘মি টু’ লিখুন’। সোমবার রাতে দেখা গেলো, সেই টুইটে রিপ্লাই কমেন্ট করেছেন ৫৩ হাজার মানুষ! ‘মি টু’ রিটুইট হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি। আর ফেসবুকে ২৪ ঘণ্টায় ১ কোটি ২০ লাখ পোস্ট, রিএকশন ও কমেন্ট পড়েছে এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে।

লাখ লাখ মানুষ ‘মি টু’ লিখে নিজেদের ভোগান্তির কথা জানাচ্ছেন। মাত্র দুই শব্দ ‘মি টু’তে বলা হয়ে যাচ্ছে দুঃসহ যন্ত্রণার মূল কথা। অনেকে প্রথমবারের মতো না বলা যৌন হয়রানির কথা বলছেন, অনেকেই শুধুমাত্র ‘মি টু’ লিখেছেন, কোনো গল্প না। তবুও বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে না, যৌন হয়রানির মাত্রাটা কত ভয়ানক! অ্যলিজা তাই চেয়েছিলেন, যৌন হয়রানির মাত্রা কতটা ভয়াবহ, এবং মানুষের অংশগ্রহণে তা সামনে নিয়ে আসাটাই ছিল উদ্দেশ্য। ঘরে, বাইরে, অফিসে কোথায় নির্যাতিত হচ্ছে না নারী? ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগের লেখাগুলো পড়লে এমন প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দিবেই।

মার্থা আর্মস্ট্রং নামের এক ৬৯ বছর বয়সী জীবনে প্রথমবারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার বেদনার কথা জানান। ২০ বছর বয়সে ধর্ষিত হয়েছিলেন তিনি। ধর্ষকের তার প্রতি একটি কথাও ছিল- ‘কাউকে কিছু বলো না’ কিন্তু মার্থা চুপ থাকেননি। পুলিশকে জানিয়েছিলেন। এ ঘটনায় বিপর্যস্ত মার্থাকে চাকরিও হারাতে হয়েছিল মাস শেষে। কারণ তিনি কাজে অস্বাভাবিক এবং নার্ভাস থাকতেন, এবং বসের সাথে কোনো বিশেষ সম্পর্কে জড়াননি।

অনেকে ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বাংলাতেও লিখছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা। বাংলাদেশে সাধারণত, যৌনতা নিয়ে কথা বলা অনুচিত এমনটাই মনে করা হয়। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে লুকোছাপা করে কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে কিনা এ প্রশ্ন অনেকেরই। চোখ ঢেকে, মুখ বন্ধ করে তো আর যাইহোক কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।

যৌনতা নিয়ে নানা রকম সংস্কার কাজ করে বলে যৌন হয়রানি হলে চুপ থাকা একটি অপসংস্কার। চুপ থাকার এই শৃঙ্খল ভাঙা জরুরি। কারণ এটা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়। এটা সমাজবদ্ধ প্রাণি মানুষের মনুষত্ব্য প্রমাণের ব্যাপার বলে একে অগ্রাহ্য করা অনুচিত। অযাচিত স্পর্শের অভিজ্ঞতা মানুষ চাইলেও সারা জীবন ভুলতে পারে না। এবং নিজের ভিতরে লুকিয়ে রেখে রেখে এর থেকে নানা ধরণের মানসিক জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে। তার চেয়ে বরং এখনই সময়, নিজেকে প্রকাশ করুন। যারা অপছন্দ করবেন তাদেরকে ধন্যবাদ বলে দিন, কারণ আপনার বেদনা যারা বুঝতে পারবে না তারা কখনই আপনার বন্ধু ছিল না।

রওশন আরা মুক্তা: সাংবাদিক


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply