রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এসব টিউবওয়েলের পানি পান করে উপজেলার শতাধিক মানুষের শরীরে দেখা দিয়েছে আর্সেনিকের চিহ্ন। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা বা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এ পর্যন্ত ৩হাজার দুইশ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। পাশপাশি ব্যক্তিভাবে বসানো হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টিউবওয়েল। এর মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের প্রায় ১হাজার টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর, ইসলামপুর, বহরপুর, নবাবপুর,নারুয়া, জঙ্গল,জামালপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ এখন রয়েছে পানি বাহিত আর্সেনিকের ঝুঁকিতে। আক্রান্ত ব্যাক্তিদের অভিযোগ এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন সংস্থা থেকে এখনো পানি পরীক্ষা বা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীরা রোগাক্রান্ত ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে উপজেলার সমাজকর্মী ও জন প্রতিনিধিরা।
বহরপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোর্শেদ শেখ(৩৫) বলেন,আমার শরীরের হাত পা মুখ বুকে পিঠে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ উঠেছে। এলাকার মানুষেরা বলছে আর্সেনিক হয়েছে। ভয়ে এখন নিজের বাড়ির টিউবওয়েলের পানি খাচ্ছি না। আমার মত গ্রামের অন্যরাও আতঙ্কে রয়েছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের গৃহবধূ হেলেনা আঞ্জু লিপি বলেন, আমরা এখন এসব পানি দিয়ে ধোয়া মোছার কাজ করি। অনেক দিন ধরে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করায় এসব চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। আর্সেনিকের ভয়ে নিজের বাড়ির টিউবওয়েলের পানি খেতে পারি না।
স্থানীয় সমাজকর্মী এস এম হেলাল খন্দকার বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর, ইসলামপুর, বহরপুর, নবাবপুর,নারুয়া, জঙ্গল,জামালপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ এখন রয়েছে পানিবাহিত আর্সেনিক রোগের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বসবাস করছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও টিউবয়লের পানি পরীক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য বিষ্ণু পদ সাহা বলেন, গ্রামে আর্সেনিক রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে। অধিকাংশ মানুষের হাতে পায়ে ফোসকার মত দাগ উঠেছে। আমাদের দাবী এই বিষয়টির প্রতিকার হোক।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ রহিম বকস বলছেন, হাসপাতাল সহ স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।আর্সেনিক মুক্ত পানি পান করে পর্যাপ্ত পরিমানে শাক সবজি ও ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা জানান, সোস্যাল মিডিয়া আর মাইকিং এর মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করা হচ্ছে।৭টি ইউনিয়নের চেয়রম্যানের দ্বারা জনগনকে অবহিত করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকবল কম সেহেতু যার যার টিউবওয়েলের পানি যদি নিয়ে আসে তাহলে আমরা তা পরীক্ষা করে তাতে আর্সেনিকের মাত্রা কতটুকু বা আর্সেনিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারবো।
ইতোমধ্যে আমরা আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করেছি এবং ইউএসপিও এর মাধ্যমে জানতে পেরেছি দুই একজন রোগী হাসপাতালেও দেখতে পাচ্ছি। এটা আসলে খুবই এলারমিং।
Leave a reply