বিনা বেতনে ২৭ বছর ধরে পাঠদান করছেন চার শিক্ষক!

|

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রায় তিন দশক ধরে বিনা বেতনে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন কমলগঞ্জ উপজেলার একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের টিনসেডের ঘরটিও তৈরি হয়েছে এলাকাবাসী ও তাদের আর্থিক সহায়তায়। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর ২৭ বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত জাতীয়করণ হয়নি সেটি।

জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের জশমতপুর গ্রামে ১৯৯১ বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। খতিজা বিবি ও আব্দুল গফুর নামে স্থানীয় দাতাদের দেয়া ৩৩ শতক ভূমির উপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ, আব্দুল হান্নান, রত্না রাণী পাল ও মৌসুমী আক্তারকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু দরিদ্র এলাকাবাসীর সামর্থ না থাকায় বিগত ২৭ বছর ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, জীর্ণ টিনের ঘর, বাঁশের বেড়া, ভাঙা দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল ব্রেঞ্চের সংকটাপন্ন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামবাসী ও শিক্ষকদের অর্থায়নে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হলেও টিনশেডের ঘরটি অর্থাভাবে আর সংস্কার সম্ভব হয়নি। যার ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলছে পাঠদান। আসবাবপত্র, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত সেনিটেশনেরও রয়েছে সমস্যা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী হতদরিদ্র পরিবারের হলেও সরকারি উপবৃত্তি থেকে তারা বঞ্চিত রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে বইপত্র ভিজে যায়। জোরে বাতাস শুরু হলে ভয়ে সবাই বাড়িতে চলে যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শিক্ষকরাও ছুটি দিয়ে দেন।

শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, সেই তরুণ বয়সে বিনা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করি। স্কুল একদিন জাতীয়করণ হবে দিন ফিরবে সেই আশায় আজ মধ্যবয়সও পার করছি আমরা চার শিক্ষক। বিনা বেতনে এখনও চালিয়ে যাচ্ছি পাঠদান।

স্থানীয়রা জানান, জাতীয়করণের আশায় পাঠদান চালিয়ে গেলেও আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে হতাশ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। আশপাশে কোন বিদ্যালয় না থাকায় জশমত গ্রাম ছাড়াও দেবীপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর ও দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। বিনা বেতনে শিক্ষকতা করা চার শিক্ষকের আর্থিক অবস্থাও ভালোনা। যার ফলে অনেক কষ্টে তারা বিদ্যালয়ের পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক আব্দুল ওয়াহিদ জানান, প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করছে। বর্তমান সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ এমপি, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলী এমপি’র সুপারিশসহ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এরপরও এটি জাতীয়করণ না হওয়ায় আমরা শিক্ষকরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। দ্রুত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে এ বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের আশপাশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এটি জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগামী শিক্ষা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে আমি সাধ্যমত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জাতীয়করণ দীর্ঘদিনেও কেন হলো না বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply