নদী দখল করে এভাবেই চলছে ধানচাষ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
নদী দখল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঝিনাইদহের ১৫টি নদী। এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো এখন মরা খাল। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদী ছিল। তাই নদীবক্ষে চলছে চাষাবাদ।
সংস্কার না করায় তলদেশ ও নদীর দু’পাড় ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে বাড়ি ঘর ও দোকানপাট। প্রভাবশালীদের নদী দখলের মহোৎসব কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, নবগঙ্গা, কালী, কুমার, ডাকুয়া, চিত্রা, বেগবতী (ব্যাঙ), কপোতাক্ষ, ফটকি, ভৈরবসহ ১৫ নদ-নদী এরই মধ্যে অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নবগঙ্গা, বেগবতী ও ফটকি নদী। এর মধ্যে শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা। এ নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় ভবন। নদীর জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বিলাসবহুল রিসোর্স সেন্টার। কেউ কেউ করছেন শখের বাগান। একইভাবে শহরের চাকলাপাড়ায় নদীর জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীতে বোরো ধানের আবাদ করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গৌরময় স্মৃতি বিজড়িত ঝিনাইদহ সদর উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বিষয়খালী বাজার। এ বাজার গড়ে উঠেছে বেগবতি নদীর পাশে। ঐতিহাসিকভাবে এ নদীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কালের বিবর্তনে এখন এ নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীর জায়গা দখল করে মার্কেট, বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। নদীতে চলছে ধানচাষ।
একইভাবে সদর উপজেলার হাজিডাঙ্গার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতেও ধান চাষ করা হচ্ছে। সদরের সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা, হাজরা, গান্না, গোবিন্দপুর, কোটচাঁদপুরের ধোপাবিলা, লক্ষ্মীপুর, ওয়াড়িয়া ও শিরনগর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা নদীর অর্ধেক জায়গা এলাকার প্রভাবশালীরা ৯৯ বছরের লিজের কথা বলে দখল করে পুকুর করেছেন এবং চাষাবাদ করা হচ্ছে। এই নদীর কালীগঞ্জ অংশেও নদীর জায়গা দখল করে দোকান ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া মহেশপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কপোতা, ভৈরবা, ইছামতি, কোদলা ও বেতনা। কোদলা নদীর জায়গা দখল করে বড় বড় পুকুর তৈরি করা হয়েছে এবং ধান চাষ করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বুড়া ভৈরব নদ ও বেগবতী (ব্যাঙ) নদ-নদীর জায়গা দখল করেছেন এলাকার ৫৩ জন দখলদার। তারা মার্কেট, বাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। দুইপাড়ের জায়গা দখল করে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
শৈলকুপা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গড়াই, কালী নদী ও কুমার নদ। বর্তমানে নদী বক্ষ থেকে মাটি ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়ে গেছে। এ নদীর দুই ধারের জায়গা দখল করে বাড়ি, মার্কেট ও বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি নদীর ভিতর থেকে মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু।
কুমার নদের শৈলকুপা অংশের বারইপাড়া এলাকা, কবিরপুর, বিজুলিয়া, ফাজিলপুর অংশসহ বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। এসব জেগে ওঠা চরে চলছে কলাই, মসুর, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। খননের অভাবে জেগে ওঠা চরে চরানো হচ্ছে গবাদি পশু। ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত অধিকাংশ নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে চলছে দখলবাজি। যে যার ইচ্ছেমত নদী ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে সরকার বা জেলা প্রশাসনের কোনও তদারকি নেই বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নদীর জায়গা দখল হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমি উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছি। নির্দেশ আসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a reply