১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর। উত্তাল এক রাতের পর বলশেভিকদের চূড়ান্ত বিজয় ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ ওরফে লেনিনের নেতৃত্বে। পতন হলো পরাক্রমশালী জারের। শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। সারা দুনিয়ায় সাড়া জাগানো যে ঘটনাপ্রবাহ পরিচিত ‘অক্টোবর বিপ্লব’ নামে।
মজার বিষয় হলো, ঠিক পরের বছরই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী পালন করা হয় ৭ নভেম্বর। একইদিনে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর ‘বিপ্লবের শতবর্ষ’ বলে বাড়তি আগ্রহ ৭ নভেম্বরকে ঘিরে।
কিন্তু, ২৫ অক্টোবরের বার্ষিকী ৭ নভেম্বর কেন? এ প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে দিনপঞ্জির জটিল সমীকরণে। বিপ্লবের পরের এক বছরেই ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে হারিয়ে যায় ১৩টি আস্ত দিন। যার কারণ জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে রূপান্তর।
জুলিয়ান থেকে গ্রেগরিয়ান
পশ্চিমা বিশ্বে দিনপঞ্জির আধুনিক ধারাটি শুরু হয় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের আমলে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫ সাল থেকে চালু হওয়া এ দিনপঞ্জি তাঁর নামানুসারেই পরিচিত ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে। পরের দেড় হাজার বছরের বেশি সময় দিন-তারিখের হিসাবের সার্বজনীন ভিত্তি ছিল এ ক্যালেন্ডার। তবে বিপত্তির শুরু ১৫৮২ সালে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে সামান্য সংস্কারের সুপারিশ করেন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। সংশোধিত এ দিনপঞ্জি তাঁর নামেই পরিচিত ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’ হিসেবে; কথ্য ভাষায় এখন আমাদের অনেকের কাছে যেটা ইংরেজি ক্যালেন্ডার। ধীরে ধীরে সার্বজনীন হয়ে উঠলেও শুরুর দিকে বিতর্ক কম হয়নি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নিয়ে। ক্যাথলিক পোপের সংস্কার বলে নতুন ক্যালেন্ডার মানতে অস্বীকৃতি জানায় খ্রিস্টান ধর্মের অন্য শাখাগুলো। বিরোধীদের তালিকায় ছিলো অর্থোডক্স খ্রিস্টান মতের দেশ রাশিয়াও। ১৬ থেকে ১৭ শতকের মধ্যে পশ্চিমা সব দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে চলে গেলেও, ১৯১৭-র বিপ্লব পর্যন্ত রাশিয়ায় প্রচলিত ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে রুশ বিপ্লব হয় ২৫ অক্টোবর, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে দিনটি ছিল ৭ নভেম্বর। বিপ্লবের তিন মাসের মাথায় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বাদ দিয়ে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালুর সিদ্ধান্ত নেন লেনিন। ওলট-পালট হয়ে যায় দিন-তারিখের অনেক হিসাব। ‘অক্টোবর বিপ্লব’ চলে আসে নভেম্বরে।
ভগ্নাংশের সমীকরণ
১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জি গ্রহণ করে, তখন জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় পার্থক্য হয় ১৩ দিনের। যদিও এক বছরে দুই ক্যালেন্ডারের তারতম্য ভগ্নাংশের হিসেবে। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে এক বছরের দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬৫.২৫ দিন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে যা ৩৬৫.২৪২২ দিন। দুই ক্যালেন্ডারে এক বছরে দৈর্ঘ্যের পার্থক্য মাত্র ০.০০২ শতাংশ বা ১১ মিনিট। বছরে এই ১১ মিনিটের পার্থক্যই প্রতি ১২৮ বছর পরে গিয়ে দাঁড়ায় ১ দিনে। এ সমীকরণ অনুসারেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করতে গিয়ে এক ধাপে ১৩ দিন এগিয়ে যায় রাশিয়ার দিনপঞ্জি। ১৯১৮ সালের জানুয়ারি শেষে সরাসরি ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ লেখেন সোভিয়েতের বাসিন্দারা।
যমুনা অনলাইন: এফআর
Leave a reply